কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি মিললেও আস্থার সংকট কাটেনি। ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ১ ডিসেম্বর থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে বলা হলেও, আদৌ পর্যটক নিয়ে জাহাজ স্বপ্নের প্রবাল দ্বীপে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কেননা শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাত ৮টা পর্যন্ত কেয়ারী সিন্দাবাদে মাত্র ৯টি টিকিট বিক্রি হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারের বেঁধে দেওয়া ট্রাভেল পাসের ব্যাপারে কোনো ধারণা নেই সেন্টমার্টিন ঘুরতে ইচ্ছুক পর্যটকদের। ট্রাভেল পাস কী জিনিস, এ সম্পর্কেও অনেকেই জানেন না।
অন্যদিকে সেন্টমার্টিনের স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রবাল দ্বীপে জাহাজ ঢুকতে না দেওয়ার হুমকি। ফলে পর্যটক সংকটে গত ২৮ নভেম্বর কোনো জাহাজ কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। এ কারণে মালিক কর্তৃপক্ষ জাহাজ চলাচলের তারিখ পিছিয়ে ১ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেছে। এখন যাত্রীদের আস্থার সংকট না কাটায় তাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি ও নাফ নদীতে ডুবোচর জেগে ওঠার কারণে আপাতত টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। কেবল কক্সবাজার শহরের নুনিয়ার ছড়ার বিডব্লিউটির ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল করবে।
কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড লিমিটেডের কক্সবাজার শাখার ইনচার্জ নুর মোহাম্মদ ছিদ্দিকী কালবেলাকে বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে লিখিত অনুমতি পেয়েছি। তবে যাত্রী সংকটের কারণে চলাচল শুরু হওয়ার তারিখ ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিনও যে জাহাজ ছাড়বে, এটি বলা যাচ্ছে না। আজ পর্যন্ত কেয়ারী সিন্দাবাদের ৯টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। সরকার ভ্রমণের জন্য ট্রাভেল পাস তুলে না নিলে সেন্টমার্টিনে যাত্রী যাবেন বলে মনে হচ্ছে না।
সেন্টমার্টিনে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ কমিটির আহ্বায়ক এবং কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, নাফ নদীতে ডুবোচর জেগে ওঠা এবং মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলির কারণে নিরাপত্তাঝুঁকি থাকায় টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
এর আগে গত ১৯ নভেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্যদের মধ্যে কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, ট্যুরিস্ট পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিনিধি রয়েছেন।
নতুন বিধিনিষেধ অনুযায়ী, সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি পর্যটক ঢুকতে পারবেন না। এ ছাড়া রাতযাপন শুধু ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে অনুমোদিত হবে। তা ছাড়া পর্যটকদের পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
দ্বীপবাসীর হুঁশিয়ারি
সেন্টমার্টিনে জাহাজ ঢুকতে দেবেন না এখানকার বাসিন্দারা। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের রাতযাপন নিষিদ্ধ ও ভ্রমণ সীমিতকরণের প্রস্তাবসহ সরকারের পক্ষ থেকে গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না করলে এবং দ্বীপবাসীর জীবন-জীবিকার পথ খুলে না দিলে কোনো পর্যটককে দ্বীপে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
গত বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের যাতায়াত ও অবস্থান সীমিত করার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন দ্বীপের বাসিন্দারা।
মানববন্ধনে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের রাতযাপন নিষিদ্ধ ও ভ্রমণ সীমিতকরণের প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে গৃহীত নানা সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে দ্বীপবাসীর জীবন-জীবিকার পথ খুলে দিতে হবে। অতীতের কোনো সরকার দ্বীপ নিয়ে এমন তালবাহানা করেনি। কিন্তু বর্তমান সরকার পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার নামে পর্যটনশিল্প ধ্বংস করার পাঁয়তারা শুরু করেছে। সরকার যদি তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তাহলে দ্বীপের বাসিন্দারা কোনো পর্যটককে দ্বীপে প্রবেশ করতে দেবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন।
বিক্ষুব্ধ বাসিন্দারা আরও বলেন, সেন্টমার্টিন নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পরিবেশের দোহাই দিয়ে দ্বীপবাসীকে মারার ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে। সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের রাতযাপন নিষিদ্ধ ও ভ্রমণ সীমিতকরণের প্রস্তাব দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে।
সম্প্রতি নাফ নদীতে ডুবোচর জেগে ওঠার কারণে নাব্য সংকট এবং মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলির কারণে নিরাপত্তার অভাবে আপাতত টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। শুধু কক্সবাজার শহরের নৌঘাট থেকে জাহাজ চলাচল করবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।
মন্তব্য করুন