ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক তোফাজ্জল হোসেনের মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই গাজীপুরের শ্রীপুরে ইসরাফিল নামের এক যুবককে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে গায়ে গরম পানি ঢেলে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় এক বিএনপি নেতার নেতৃত্বে বসতবাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিহতের বাবা নাছির বাদী হয়ে ৭ জনের নামোল্লেখ করে হত্যা মামলা করেছেন। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেন শ্রীপুর থানার ওসি মো. জয়নাল আবেদীন।
মামলার আসামিরা হলেন- বিএনপি নেতা কামরুল হাসান লিটন (৫০), বাবুল মণ্ডল (৪৫), শফিকুল ইসলাম (৩২), জলিল (৬৫), ইউসুফ (৪০), সোহাগ (৪০) ও ছাত্তার (৫৫)। এ ছাড়া মামলায় ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর বাদী নাছিরের ছেলে ইসরাফিলকে কাজের কথা বলে বাড়ি থেকে বিবাদীরা ডেকে নিয়ে যায়। পরে তারা শ্রীপুর থানাধীন শৈলাট মেডিকেল মোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে মসজিদের ব্যাটারি চুরির অপবাদে ইসরাফিলকে লোহার রডসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করে। অভিযুক্তরা ভিকটিমের বুক, পিঠ, হাত, মাথা, পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম করে এবং দুই পা ভেঙে দেয়। এক পর্যায়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ভিকটিমকে তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার মারা যান ইসরাফিল।
স্বজনদের অভিযোগ, শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের বাঁশবাড়ি গ্রামের পেশায় নির্মাণ শ্রমিক ইসরাফিল। গত ১৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। ওই দিন স্থানীয় সোহাগসহ কয়েকজন যুবক তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে স্থানীয় ব্যাপারি বাড়ি জামে মসজিদের চুরি যাওয়া ব্যাটারি সম্পর্কে জানতে চায়। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির অদূরে শৈলাট পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। সেখানে নিয়ে তার হাত, পা রশি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। তারপর ইসরাফিলের উপর চলে ব্যাটারি চুরির অপবাদে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন। লোহার রড দিয়ে পায়ের পাতা থেকে শুরু করে পিঠ পর্যন্ত পেটানো হয়। পরে কোমরের নিচে গরম পানি ঢেলে দেয়। গরম পানিতে যুবকের দুই পায়ের পাতা থেকে কোমর পর্যন্ত ফোসকা পড়ে যায়।
এ ঘটনায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর কামরুল হাসান লিটন, বাবুল মণ্ডল, শফিকুল ইসলামের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৬-৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ইসরাফিলের বাবা। কিন্তু তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেনি পুলিশ। পরে বৃহস্পতিবার ইসরাফিল মারা গেলে পুলিশ অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে।
মূল অভিযুক্ত কামরুল হাসান লিটন (৫০) গাজীপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, কামরুল হাসান লিটনের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন ইসরাফিলের ওপর ওই নির্যাতন চালান।
মন্তব্য করুন