রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখভাগের যোদ্ধা মো. সালমান। শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঠিক আগ মুহূর্তে গত ৫ আগস্ট দুপুরে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ছাত্রজনতার শান্তিপ্রিয় মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে রাজশাহীর বঙ্গবন্ধু কলেজের দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সালমান পেটে গুলিবিদ্ধ হন।
জানা যায়, গুলিটি তার পেটের বামপাশ দিয়ে ঢুকে মেরুদণ্ডের হারের সঙ্গে আটকে আছে। কয়েক দফা অস্ত্রোপচার করেও তা বের করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় গুলি পেটে নিয়েই চিকিৎসা শেষে বাড়িতেই অবস্থান করছেন সালমান।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগরীর কোর্ট এলাকার বশড়ি মোড়ে সালমানের নিজ বাড়িতে তার সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হয়।
সাক্ষাৎকারে সালমান বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট আমরা বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে নগরীর তালাইমারী মোড় থেকে জিরোপয়েন্টের দিকে যাচ্ছিলাম। আমরা নগরীর আলুপট্টি স্বচ্ছ টাওয়ারের কাছে পৌঁছলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর দেশীয় ধারালো অস্ত্র, শর্টগান, রিভলবার দিয়ে গুলি ও হামলা চালায়। আমি একেবারে সামনের সারিতে ছিলাম। এ সময় হঠাৎ একটি গুলি আমার পেটের বামপাশে লাগে। মুহুর্মুহু গুলি আর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলার কারণে আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। পরে এক বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানে এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পর ওইদিন বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় চারঘণ্টা পর আমাকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করা হয়। ’
সালমান বলেন, ‘গুলিতে আমার পেটের খাদ্যনালি ছিঁড়ে গিয়েছিল। চিকিৎসকরা এগুলো ঠিক করে দিয়েছে। কিন্তু গুলিটি আমার স্পাইনাল কর্ডে আটকে আছে। এজন্য এটি এখন বের করতে গেলে পঙ্গুত্ববরণ এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে। তাই চিকিৎসকরা বলেছে, এটি এখনই বের করা যাবে না তবে গুলিটির রি-এ্যাকশন নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।’
সালমানের বাবা মো. রবি বলেন, ‘৫ আগস্টের আন্দোলনে আমার ছেলের পেটে গুলি লাগে। কিন্তু অপারেশনের পরেও তার গুলিটি বের করা সম্ভব হয়নি। এই সরকারের কাছে আবেদন, সরকারিভাবে আমার ছেলের গুলিটি বের করার যেন ব্যবস্থা করা হয়। আমার ছেলে ছোট মানুষ। এই গুলি নিয়ে কতদিন বেঁচে থাকবে এই চিন্তায় আমি মাঝেমধ্যেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছি।’
রামেক হাসপাতালের চিকিৎসরা বলছেন, মেডিকেল কর্তৃপক্ষের বিশেষ তত্ত্বাবধানে আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা চলছে। ধীরে ধীরে সবার শরীরের অবস্থা উন্নতি হচ্ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, ডিপার্টমেন্টের প্রধানরা প্রতিদিন আসছেন। প্রতিদিন আহতদের স্বাস্থ্যের উন্নতি, অবনতি পর্যবেক্ষণ করছেন। সম্প্রতি হাসপাতালে তাদের সঙ্গে দেখা করে চিকিৎসার বিষয়ে তদারকি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় সমন্বয়করা।
রাজশাহীর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুর রহিম বলেন, ‘৫ আগস্ট রাজশাহীতে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ছাত্র আন্দোলনে গুলি ও হামলা চালায়। গুলিতে আমাদের শতাধিক সহযাত্রী আহত হন। এ ছাড়া একজনকে ঘটনাস্থলে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। মাথায় গুলি লেগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলী রায়হান নামের আরেক ভাই শহীদ হন। সর্বশেষ হাসপাতালে ৮ জন চিকিৎসাধীন ছিলেন। চারজন কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এখন হাসপাতালে ৪ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমরা সার্বক্ষণিক তাদের খোঁজখবর রাখছি।’
মন্তব্য করুন