নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডের একটি কারখানা থেকে বের করে আনা এক যুবলীগ নেতার ১৫ ট্রাক মালামাল আটক করে পুলিশের হেফাজতে দিয়েছিলেন ছাত্র-জনতা।
বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে এসব মালামাল আটক করা হয়। যার মূল্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা। পরে বিভিন্ন কৌশলে রাতের আঁধারে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল নেতা শাহেদ আহম্মেদ সব মালামাল ছিনিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মালগুলো ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুবলীগ নেতা বর্তমানে প্রবাসে অবস্থানরত আবু হানিফ হৃদয়ের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের।
জানা যায়, আদমজী ইপিজেডের ইউনেস্কো (বিডি) লিমিটেড কারখানার চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ডিনকুম ট্রেড ইন্টারন্যাশলের অনুকুলে কারখানা কর্তৃপক্ষ ১২ ট্রাক জুট (ফ্লোর ডাস্ট ও গার্বেজ) ও ৪ টন কাগজের কার্টুন, ৫০০ কেজি পলি বিক্রির অনুমতি প্রদান করেন। ডিনকুম প্রতিষ্ঠানের পক্ষে গত মঙ্গলবার ১৫ ট্রাক মালামাল কাস্টমস গেট পাস করায়।
তবে সাড়ে ৪ টনের পরিবর্তে প্রায় ২০ টন মাল বাহিরে যাচ্ছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা একেএম এনামুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। পরে তিনি সরেজমিনে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ কালক্ষেপণ করে গত বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত মালামাল নামিয়ে নির্ধারিত সাড়ে ৪ টন মাল ট্রাকে লোড করলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মালগুলো ইপিজেড থেকে বের হওয়ার অনুমতি দেন।
এদিকে ঢাকা মহানগরের এক যুবলীগ নেতা ইপিজেড থেকে মালামাল নিয়ে যাচ্ছে এমন খবর পেয়ে স্থানীয় ছাত্র-জনতা ট্রাক ভর্তি মালামাল আটক করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা হেফাজতে দেয়।
এ নিয়ে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত থানায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল নেতা শাহেদের সঙ্গে পুলিশের দেন দরবার শুরু হয়। এতে অপত্তি জানান স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতা। পরে গভীর রাতে ১৫ ট্রাক মালামাল যুবদল নেতা শাহেদ নিয়ে গেছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ছাত্র-জনতা। যুবলীগ নেতার মালামাল যুবদল নেতা ছিনিয়ে নেওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা হতবাক।
এ বিষয়ে স্থানীয় ছাত্র-জনতা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, কোনো দলের কেউ আদমজী ইপিজেডে ব্যবসা করতে পারবে না। এখানে শুধু প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে। বিগত সময়ে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে যারা অনিয়ম করেছে তাদের লাইসেন্স বাতিলের জন্য ইপিজেড কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তারা।
মাল বেশি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনেস্কো কারখানা কর্তৃপক্ষ জানান, এ কারখানাটি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া, ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা মতিউর রহমান মতির অধীনে। কারখানার কিছু অসাধু ব্যক্তি আর্থিক সুবিধা নিয়ে প্রতি মাসেই বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত মালামাল উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাচার করত। এ ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার সাড়ে ৪ টনের স্থলে প্রায় ২০ টন মালামাল ট্রাকে ভর্তি করে।
আদমজী ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আহমেদ সিদ্দিক জানান, ইপিজেডে নিয়মের বাইরে কোনো কিছু হবে না। তদন্তে বেশি মালামাল দেওয়ার প্রমাণ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল নেতা শাহেদ আহম্মেদ জানান, এ মালামাল ঢাকা দক্ষিণ মহানগর ছাত্রদল সদস্য সচিব নিলয়ের। সে আমাকে জানায় তার মালামাল আটক করা হয়েছে। তাই আমি সিদ্ধিরগঞ্জে গিয়ে বিষয়টি সমাধান করি যাতে বিএনপির কোনো বদনাম না হয়।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, কাগজপত্রে যাদের বৈধতা রয়েছে তাদের মাল বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে আমার করার কিছুই নেই।
মন্তব্য করুন