কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৩, ০৯:১৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আগস্ট-সেপ্টেম্বরের শেষেই কক্সবাজারে আসবে ট্রেন : রেলমন্ত্রী

আগস্ট-সেপ্টেম্বরের শেষেই কক্সবাজারে আসবে ট্রেন : রেলমন্ত্রী

চলতি বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরের শেষেই ঢাকার সঙ্গে কক্সবাজারের রেল যোগাযোগ সংযুক্ত হবে বলে আবারও ঘোষণা দিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। চলমান প্রকল্পে এরই মধ্যে ৮৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি। বাকি ১৬ শতাংশ কাজ অতিদ্রুত শেষ হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন রেলমন্ত্রী।

আজ মঙ্গলবার কক্সবাজারের ঝিলংজায় দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনের নির্মাণকাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে রেলমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অক্টোবরেই এ রেলযাত্রার শুভ উদ্বোধন করবেন বলে আশা রাখছি। এটি চালু হলে দেশের পর্যটন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই রেল।

এদিকে, চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। এ পথের প্রধান আকর্ষণ দেশের প্রথম আইকনিক রেলস্টেশন। বিশাল আকৃতির একটি ঝিনুকের পেটে মুক্তার দানা, তার চারপাশে পড়ছে স্বচ্ছ জলরাশি- এ আবহের মাঝেই আসবে ট্রেন। দৃষ্টিনন্দন আধুনিক এ স্টেশন উন্নত বিশ্বের বিমানবন্দরের মতো দেখাবে। দেশের প্রথম আইকনিক রেলস্টেশনের নির্মাণকাজ এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, কক্সবাজার অংশের ৫০ কিলোমিটার রেললাইনের কাজ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম অংশের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ২৫ কিলোমিটারের কাজ শেষ এবং বাকি ২৫ কিলোমিটারের কাজ আগস্টের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। সব মিলিয়ে রেললাইন পুরোপুরি চালু হলে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে পর্যটনশিল্পে। অক্টোবরে সেই নতুন যুগের সূচনা হতে পারে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যেই চলমান ২৫ কিলোমিটারের কাজ শেষ করতে পারব বলে আমরা আশা করছি। এ ২৫ কিলোমিটারের মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু স্লিপার আর রেল বিট বসবে। আগস্ট-সেপ্টেম্বর এই দুই মাসে ফিনিশিং ওয়ার্কসহ অবশিষ্ট কাজ শেষ করে অক্টোবরে ট্রায়ালরান উদ্বোধন করতে পারব বলে আশা করছি। প্রথমত, আমরা এক জোড়া ট্রেন দিয়ে হলেও চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ম্যানেজার মো. আবদুল জাবের মিলন বলেন, কক্সবাজার সৈকত তীর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে ঝিলংজার চান্দেরপাড়ায় প্রায় ২৯ একর জায়গাজুড়ে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন আইকনিক ঝিনুকাকৃতির রেলস্টেশন এখন দৃশ্যমান। এটি নির্মাণের সময় চীন, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড ও ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক স্টেশনের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করা হয়েছে। পুরো প্রকল্পটিতে ১১০ জন বিদেশিসহ মোট ২৫০ জন প্রকৌশলী এবং শ্রমিকসহ মোট ছয় শতাধিক লোকের চার বছরের শ্রমে আইকনিক রেলস্টেশন ভবনটি আজ দৃশ্যমান। এখন চারদিকে চলছে গ্লাস ফিটিংস, ছাদের স্টিল ক্যানোফি, আর নানা ধরনের ফিটিংস বসানোর কাজ।

তিনি আরও জানান, প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৪ ভাগের বেশি। এশিয়ার প্রথম শতভাগ পর্যটনবান্ধব কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছয়তল বিশিষ্ট স্টেশনটির সম্পূর্ণ ফ্লোর এরিয়া ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুট। রাখা হয়েছে পর্যটকদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা। পর্যটকরা যেন কক্সবাজারে দিনে এসে ঘুরে আবার ফিরে যেতে পারেন, সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। শুধু এই আইকনিক রেলস্টেশন নয়, এই প্রকল্পের আওতায় আরও ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। কক্সবাজার থেকে ফিরতি পথের প্রথম স্টেশন রামু, এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে ইসলামাবাদ, ডুলাহাজারা, চকরিয়া, হারবাং, লোহাগড়া, সাতকানিয়া ও দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন। চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন ছিল দেশের দক্ষিণ জেলাবাসীর জন্য স্বপ্ন- যা এখন বাস্তবায়নের পথে।

প্রকল্প পরিচালক মুফিজুর রহমান জানান, কক্সবাজারে অধিকাংশ পর্যটক এক দিনের জন্যই আসেন। এ সময় তারা নিজেদের মালপত্র রাখার নিরাপদ জায়গা পান না। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে স্টেশনে রাখা হচ্ছে লাগেজ ও লকার সিস্টেম। এ ছাড়া থাকছে আধুনিক ট্রাফিক সুবিধা, বিশ্বমানের এ স্টেশনের নিচতলায় থাকছে টিকিট কাউন্টার, অভ্যর্থনা, লকারসহ নানা সুবিধা। দ্বিতীয়তলায় শপিংমল ও রেস্তোরাঁ। তিনতলায় থাকবে তারকামানের হোটেল, যেখানে ৩৯টি রুমে থাকার সুযোগ পাবেন যাত্রীরা। থাকছে মসজিদ, শিশু যত্ন কেন্দ্র ও চলন্ত সিঁড়ি। থাকছে সাধারণ ও ভিআইপিদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ড্রপ এরিয়া, বাস, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস এবং থ্রি হুইলারের জন্য আলাদা পার্কিং এরিয়া এবং এটিএম বুথ, পোস্ট অফিস, ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন বুথ ছাড়াও বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবা কেন্দ্র।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে রেলের এ মেগা প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এই মেগাপ্রকল্পের দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে ব্যয় হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার। এরমধ্যে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। অপরদিকে চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড দুই ভাগে রেললাইন নির্মাণ কাজটি করছে। ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড যে অংশে কাজ করেছে তাদের সেই অংশের কাজ খুব দ্রুত শেষ হয়েছে। এখন তমা কনস্ট্রাকশনের অংশের কাজ চলছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, চকরিয়া থেকে কক্সবাজার অংশে ২০টি সেতুর মধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। দোহাজারী-চকরিয়া অংশে ১৯টি সেতুর মধ্যে সাঙ্গু নদীর ওপর একটি, মাতামুহুরী নদীর ওপর দুটি এবং বাঁকখালী নদীর ওপর একটি বড় রেলসেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এবারের ঈদযাত্রায় সড়কে প্রাণ গেল ৪০৭ জনের

আইভীকে হুংকার হেফাজত নেতার / আমাদের মান-ইজ্জতে হামলা হয়েছে, সাবধান হয়ে যাও

নামছে পানির স্তর, বাড়ছে সংকট

মিশা-ডিপজলকে মালা পরিয়ে বরণ করলেন নিপুন

তীব্র গরমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নির্দেশনা

সিরিয়ায় ফের শক্তি দেখাল আইএস, ২৮ সেনা নিহত

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত এলো

আদালতে ছিলেন ট্রাম্প, বাইরে নিজ শরীরে আগুন দিলেন যুবক

দীর্ঘকাল পর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দৌড়ালেন ক্রিকেটাররা

১০

কুকুরের কামড়ে একই এলাকার শিশুসহ আহত ৪

১১

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল আরেক দেশ

১২

বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার খবর কী

১৩

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে ২৭ বস্তা টাকা, চলছে গণনা

১৪

ছাতকে ১৪৪ ধারা জারি

১৫

দাবদাহে নষ্ট হচ্ছে আমের গুটি, দুশ্চিন্তায় চাষিরা

১৬

শনিবার দিনটি কেমন যাবে আপনার?

১৭

মোস্তাফিজে মজেছেন পাথিরানা

১৮

ভারতে প্রথম দফায় রেকর্ড ভোটগ্রহণ

১৯

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ

২০
*/ ?>
X