চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:০৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ভবঘুরে মা-নবজাতক নিয়ে রাত জেগে পুলিশের ছোটাছুটি

ভবঘুরে মা-নবজাতক নিয়ে রাত জেগে পুলিশের ছোটাছুটি

চট্টগ্রাম নগরীর কর্মব্যস্ত এলাকা জামাল খান মোড়, রাত সাড়ে ৯টা। ওই এলাকায় টহল দিচ্ছিল কোতোয়ালি থানার এসআই মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে একটি টিম। হঠাৎ তাদের ওয়ারলেসে বার্তা আসে, এক প্রসূতি মা পড়ে আছেন ফুটপাতে। সেই টহল দল ছুটে গিয়ে দেখে ফুটপাতে শীতের রাতে ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে কাঁপছে ভবঘুরে এক নারী। রক্তে ভিজে প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন ওই প্রসূতি মা।

গতকাল সোমবার সেই রাত থেকে শুরু করে আজ মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা মা আর শিশুকে বাঁচাতে ছুটেছেন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে। আশপাশের অনেকেই এগিয়ে না এলেও পুলিশ সদস্যরা নিজ দায়িত্বে সংগ্রহ করেছেন অ্যাম্বুলেন্স আর রক্ত। ভোরে বাসায় গিয়ে মাত্র দুই ঘণ্টা ঘুমিয়ে পরদিন সকাল ৮টায় আবারও হাসপাতালে ছুটে গেছেন পুলিশের এসআই মোস্তফা কামাল। শেষ পর্যন্ত মা-নবজাতককে বাঁচাতে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছেন এ পুলিশ সদস্য।

এসআই মোস্তফা কামাল কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা টহল দিচ্ছিলাম। ৯৯৯-এ খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ওসি স্যারকে জানাই। তিনি আমাকে নির্দেশ দেন যেভাবেই হোক আগে মা-বাচ্চাকে বাঁচাও। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ওই নারী প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছেন। পাশে জেনোভা নামে একটি হাসপাতাল থেকে ডাক্তার-নার্স ডেকে আনি। সেখানে ডেলিভারির পরে একটি অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করে তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু ‘ও পজিটিভ ব্লাড’ লাগছিল যা আমাদের টিমের কারও ছিল না। তাহিম নামে একজন স্বেচ্ছাসেবক ব্লাড দিয়েছেন।’

সেদিনের টহল টিমে এসআই মোস্তফা কামালের সঙ্গে ছিলেন পুলিশের আরও চারজন কনস্টেবল, পথে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন তাহিম ও রাজ নামে দুই তরুণ। পুলিশের টহল টিম এবং তরুণরা মিলে সারা রাত কেউ ছুটেছেন ব্লাডের জন্য, কেউ খাবার নিয়ে, কেউ স্যালাইন কিংবা শীতের রাতে সেই নবজাতককে কোলে নিয়ে উষ্ঞ রেখেছেন। চমেক হাসপাতালের নিচ থেকে ট্রলি ঠেলে জরুরি চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা।

মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ভালো কাজ করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এসি স্যার, ওসি স্যার খুব সহযোগিতা করেছেন, উনারা বারবার খোঁজ নিয়েছেন। যখন যেভাবে যা করতে হয় নির্দেশ দিয়েছেন। রাতে দুজন তরুণও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন। সত্যি বলতে সবার সহযোগিতার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।’

গভীর রাতে জন্ম হওয়া ফুটফুটে সেই শিশু আর মা এখন ভর্তি আছেন চমেক হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা তাদের দেখভাল করছেন। তবে ওজন কম হওয়ায় বাচ্চাটি কিছু সময় ভর্তি ছিল এনআইসিইউতে (নবজাতক নিবিড় যত্ন ইউনিট)। তবে এখন অনেকটাই শঙ্কা মুক্ত। ভবঘুরে সেই মা ভর্তি আছে চমেক হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে।

অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা বলেন, ‘মানবিক সেবায় পুলিশ বদ্ধপরিকর। সব সময় সেভাবেই চেষ্টা করি। ভবঘুরে সেই মা মানসিক ভারসম্যহীন বলে জানতে পেরেছি। তার পরিচয় ও পরিবার খোঁজার চেষ্টা চলছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নির্বাচন / ভোট শেষে গণ্ডগোলের আশঙ্কা

ছাত্রলীগ নেতার পর এবার আ.লীগ নেতার ভিডিও ভাইরাল

কেন ৪৪ দিন ধরে চলবে ভারতের নির্বাচন

সরকারের প্রত্যেকটি অন্যায়ের রেকর্ড আছে : রিজভী

স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্র বাছাই হবে: প্রতিমন্ত্রী

শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে

ইসরায়েলি হামলার পর ইরান এখন কী করবে

ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের সদস্য করার প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো

১৩ বছর পর বাংলাদেশে আসছে জাল ব্যান্ড

নতুন ওয়েব ফিল্মে মেহজাবীন

১০

আওয়ামী লীগ দেশকে মগের মুল্লুকে পরিণত করেছে : মির্জা ফখরুল

১১

দুই হলুদের পরও মার্তিনেজ কেন পেলেন না লাল কার্ড?

১২

রাজধানীর শিশু হাসপাতালে আগুন

১৩

ইসরায়েলের হামলা / মসজিদে জড়ো হচ্ছেন ইরানি নারী-পুরুষরা

১৪

১১৫ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক ৫ মাদক কারবারি

১৫

ইরানে হামলার পর নাগরিকদের ইসরায়েল ছাড়তে বলল অস্ট্রেলিয়া

১৬

আত্রাই নদী এখন মরা খালে পরিণত, দুশ্চিন্তায় কৃষক-জেলেরা

১৭

শীর্ষে ফেরা কঠিন মোস্তাফিজের

১৮

রেখা ট্র্যাজেডি হার মানাবে হৃদয়বিদারক সিনেমাকেও

১৯

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নির্বাচন / ডিপজলকে নিয়ে ভয় কাজ করছে না : নিপুন

২০
*/ ?>
X