চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় একটি তুলার গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের ছোট কুমিরা বাইপাস রোড সংলগ্ন হিঙ্গিরিপাড়া এলাকায় লোকমানের মালিকানাধীন ইউনোটেক্সের কাছে ভাড়ায় চালিত তুলার গুদামে আজ শনিবার সকালে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের পর সপ্তাহ না পেরোতেই ফের এ উপজেলায় অগ্নিকাণ্ড ঘটল। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এরই মধ্যে সকাল সোয়া ১০টার দিকে খবর পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সীতাকুণ্ড, আগ্রাবাদ, কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুপুর ২টার দিকেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ছড়িয়ে পড়ছে আগুনের লেলিহান শিখা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তুলার গুদামের সামনে থাকা নেমসান কন্টেইনার লিমিটেড থেকে যদি সময়মতো পানি পাওয়া যেত, তাহলে আগুন দ্রুত নেভানো সম্ভব হতো।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকালে তুলার গুদামে গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে সংস্কারকাজ করছিলের শ্রমিকরা। হঠাৎ এর স্ফুলিঙ্গ তুলার মধ্যে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। পুরো গুদামে ছড়িয়ে পড়ে আগুনের ভয়াবহ দাবানল।
তুলার গুদামের স্টোর সুপারভাইজার আলাউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘এ গোডাউনে ৩০ হাজার টনের বেশি তুলা ছিল।’ স্থানীয় যুবক রুবেল বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। কিন্তু তারা দেরিতে আসার কারণে আগুনের তীব্রতা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।’
স্থানীয়রা আরও জানান, একসময় এ তুলার উদামটি কারাবন্দি বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর ডিপো ছিল। পরে এটি এসএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা লোকমানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তার কাছ থেকে ইউনিটেক্স লিমিটেড কারখানার মালিক গুদামটি ভাড়া নেন। এরপর তাদের নিজস্ব সুতা তৈরির কারখানার জন্য সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে তুলা মজুদ করেন।
সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম দুলাল কালবেলাকে বলেন, ‘স্থানীয়দের মাধ্যমে তুলার গুদামে আগুন লাগার খবর পেয়ে দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে অগ্নিনির্বাপণে কাজ শুরু করে। একই সময়ে কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিটও অগ্নিনির্বাপণ কাজে যোগ দেয়। আগুনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় আগ্রাবাদ থেকে ফায়ার সার্ভিস থেকে আরও একটি ইউনিট এসে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে পানির ব্যবস্থা না থাকায় আগুনের লেলিহান শিখা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। তুলার ডিপোর সামনে থাকা নেমসান কন্টেইনার লিমিটেড থেকে যদি সময়মতো পানি পাওয়া যেত, তাহলে আগুন দ্রুত নেভানো সম্ভব হতো। কন্টেইনার কর্তৃপক্ষ আমাদের পানির জন্য অনুমতি দেয় দুপুর ১টার দিকে।’
তিনি আরও জানান, গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে কাটিং কাজ করার সময় ওই তুলার গুদামে আগুন লাগে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে গুদামটিতে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, তার সঠিক কারণ এখনো নির্ণয় করা যায়নি। বর্তমানে আগুন নেভানোর কাজ চলছে। তবে এখনো পুরোপুরি আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
এদিকে, ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় সূত্রে শুনেছি গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে তুলার ডিপোতে সংস্কার কাজ করার সময় আগুনের সূত্রপাত হয়। তদন্ত করা ছাড়া এ মুহূর্তে কিছুই বলা যাচ্ছে না।’