দেশের স্বাধীনতাকে আজ একটি ব্যক্তি, একটি পরিবার ও একটি দল নিজেদের মূলধন করে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট এ দেশের মানুষ ভুলে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোনো জায়গায় কোনো নেতৃত্বে এমনকি স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন জাতির পিতা বা ফাউন্ডার ফাদার অথবা কোনো একজনের ব্যক্তিত্বে স্বাধীনতা আসেনি। এটা যদি করা হয়ে থাকে অর্থাৎ একজনকে সামনে রেখে সমস্ত স্বাধীনতার যুদ্ধ হয় তাহলে এটা কিন্তু মনোপলি হয়। যখন স্বাধীনতা মনোপলি হবে তখন এটা ক্ষতিকর জিনিস। বাজার যে রকম একচেটিয়া হলে ক্ষতিকর হয়, খদ্দেররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারেও মনোপলি করতে গিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে একটি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হয়েছে।’
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আজ রোববার বিকেলে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে শায়লা স্কয়ারে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জিয়াউর রহমান দেশের প্রথম মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে আমীর খসরু বলেন, ‘আমি যা বলেছি এসব তাজউদ্দীনের মেয়ের বইতে লেখা আছে। যে ফাদার অব দ্য নেশন ঠিক আছে, আমেরিকায় তো ফাদার অব নেশন আছে, ফাউন্ডিং ফাদারও আছে। যে লোকগুলোর কথা আমি বলেছি এর বাইরেও অনেকেই আছেন। যাদের নাম ফাউন্ডিং ফাদার হিসেবে আমাদের স্বীকৃতি দিতে হবে। তারা সবাই ফাউন্ডিং ফাদার্স। কারও ভূমিকা কম নয়। একেকজনের ভূমিকা একেক দিকে। জিয়াউর রহমানের ভূমিকা হচ্ছে প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি দেশের প্রথম মুক্তিযোদ্ধা। উনি কি ফাউন্ডিং ফাদার হতে পারেন না?
তিনি আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে এ দেশের আপামর জনতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশের রাজনীতি যে পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে; স্বাধীনতা দিবসের গর্বিত দিনটিকে, গর্বিত কাজটিকে গর্হিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটটা আমরা ভুলে যাচ্ছি। এ প্রেক্ষাপটের মধ্যে মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, কর্নেল ওসমানী, জিয়াউর রহমান আছেন। আরও অনেকের অবদান আছে। আজকে দেশের স্বাধীনতা একটি ব্যক্তি, একটি পরিবার, গোষ্ঠী ও একটি দলের হাতে। যেন তারা মূলধন পেয়েছে। এটাকে তারা নিজেদের মূলধন করে ফেলেছে।
আমীর খসরু বলেন, ‘জেনারেল ওসমানী সাহেব মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। উনি কি ফাউন্ডিং ফাদার হতে পারেন না? তাজউদ্দীন সাহেব স্বাধীনতাকালীন মন্ত্রিসভার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি কি ফাউন্ডিং ফাদার হতে পারেন না। মুক্তিযুদ্ধ ইনক্লুসিভ বিষয়। এটি কোনো একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হতে পারে না। এটি সমস্ত জাতির গর্ব। এই মূলধন সমস্ত জাতির মূলধন। এ গর্ব সমস্ত জাতির গর্ব। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এসব বিষয় দেখা হবে। যারা প্রাণ দিয়েছেন প্রত্যেকের নাম বাংলাদেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা হবে।’
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে এবং ডা. শামীম আল মামুন ও ডা. ঈসা চৌধুরীর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।