আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়েখ আহমাদুল্লাহ বলেছেন, সামনে কোরবানি মৌসুম আসছে। আপনারা জানেন গরু পরিবহনের ক্ষেত্রে যে গাড়িতে ১০টি গরু নেওয়া যায়, সেখানে নেওয়া হয় ২০টি। এসব করতে গিয়ে গরুর প্রতি যে নির্মমতা করা হয়, যেভাবে ওঠানো হয় তা খুবই দুঃখজনক।
রোববার (২ জুন) রাজধানীর কাকরাইল ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত চলা আলেম উদ্যোক্তাদের জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান ‘কওমি উদ্যোক্তার’ পঞ্চম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে পাঁচ শতাধিক উদ্যোক্তাকে নিয়ে আয়োজিত এক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
শায়েখ আহমাদুল্লাহ বলেন, যে গাড়িতে গরু পরিবহন করা হয় সেটার মাঝখানে বাঁশ দেওয়া হয়। যেন গরুগুলো বসতেও না পারে। বসা তো দূরের কথা দাঁড়ানোই মুশকিল হয়ে যায়। গুরুর গায়ে দাগ পড়ে যায়। অনেক জায়গায় কেটে যায়।
শায়েখ আহমাদুল্লাহ আরও বলেন, আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন এ সময় গরুর চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়তে থাকে। গরুগুলোকে ১০–১২ ঘণ্টা জার্নি করানো হয়। তাদের খাবারও আগে থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। যেন ট্রাকে পায়খানা না করে। ট্রাক নষ্ট না হয়। এ সময় গরুকে পানি দেয় না। খাবার দেয় না। আপনি যে পশু দিয়ে কোরবানি করছেন, তার যে কষ্ট, তার যে বেদনা এগুলো সে সহ্য করতে করতে আপনার পর্যন্ত এসেছে। আপনি এ পশুকে কোরবানি করেই তো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের ইচ্ছে পোষণ করছেন, করাটা স্বাভাবিক। সুতরাং এ পশুগুলো পরিবহনের ক্ষেত্রে যে নির্মমতা করা হচ্ছে সেগুলো বন্ধের প্রতিও উদ্যোগী হওয়া উচিত। এটা নিয়ে ভাবা উচিত। গরুর প্রতি জুলুম করা ছাড়া কীভাবে পরিবহন করা যায় এবং গরু বিক্রেতাদেরও লোকসান না হয় এগুলো নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত।
তিনি বলেন, ঈদ মুসলমানদের একটি ইবাদত। অথচ এই দুই ঈদে মুসলমানদের চিহ্নিত শত্রুরা এ দেশে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করে যাচ্ছে। ঈদেও তারা সমকামীর পাঞ্জাবি বিক্রি করছে। আমাদের টাকায় বিষ কিনে আমাদেরই খাওয়াচ্ছে। আর আমরা কালোজিরা-মধু বিক্রি করছি।
তিনি আলেম উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বলেন, আপনি যদি একেবারে কম টাকা বিনিয়োগে ব্যবসা শুরু করেন, তাহলে শুরুতে এসব ছোটখাটো পণ্য বিক্রিতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু ভবিষ্যতে প্রায় সব ধরনের পণ্য বিক্রিতে আলেমদের বিচরণ থাকতে হবে। এ সময় শায়েখ আহমাদুল্লাহ নিজেও আগামী এক–দুই সপ্তাহের মধ্যে ব্যবসা শুরুর কথা জানান।
কওমি উদ্যোক্তার ফাউন্ডার মাওলানা রোকন রাইয়ানের সভাপতিত্বে ও লোকমান গাজীর সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইনজীবী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, বিশিষ্ট আলোচক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ, বাংলাদেশ আই হস্পিটাল মালিবাগের ডিরেক্টর ডা. মাসুদ হাশমী, বিশিষ্ট আলোচক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মাওলানা সাইমুম সাদী, বিজনেস মেন্টর কোচ কাঞ্চন, কন্টেন্ট কিংয়ের ফাউন্ডার মুহাম্মাদ ইকরাম, লেখক-সাংবাদিক ও উদ্যোক্তা মাওলানা মিরাজ রহমান, উইট ইনস্টিটিউটের ফাউন্ডার নাজিব রাফে, আলেম উদ্যোক্তা ও স্পিকার গাজী সানাউল্লাহ রাহমানী, আওয়ার ইসলাম ২৪ ডটকম সম্পাদক মুফতি হুমায়ূন আইয়ূব, কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ বদরুজ্জামান, ইয়েস ২০ স্কুলের প্রেসিডেন্ট মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, স্টেডফাস্ট কুরিয়ার লিমিটেডের ফাউন্ডার কে এম রিদওয়ানুল বারী জিওনসহ আরও উপস্থিত ছিলেন ছোট-বড় পাঁচ শতাধিক উদ্যোক্তা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন এমপি বলেন, আমি এত এত আলেম উদ্যোক্তা দেখে গর্ববোধ করছি। আপনারা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যান। দেশকে শক্তিশালী করতে পারে তরুণ উদ্যোক্তারা। কারণ তাদের মধ্যে উদ্ভাবনী শক্তি আছে। তাই কেউ বসে থাকবেন না। সাহস নিয়ে নতুন কিছু শুরু করেন। সাকসেস আসবেই।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময় মসজিদ-মাদ্রাসা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন যখন স্থবির হয়ে যায় তখন মাওলানা রোকন রাইয়ানসহ কয়েকজন তরুণ আলেমের হাত ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘কওমি উদ্যোক্তা’ নামে একটি গ্রুপ খোলার মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানের সূচনা হয়। ২ বছরের ব্যবধানে এ গ্রুপে প্রায় ২ লাখ সদস্য যুক্ত হন। পর্যায়ক্রমে তারা বিভিন্ন ক্যাম্পেইন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আলেম উদ্যোক্তা তৈরিতে বিরাট ভূমিকা রাখেন। হাজারো আলেম উলামা ও বেকার মানুষ ‘কওমি উদ্যোক্তা’র মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
মন্তব্য করুন