ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নবনিযুক্ত প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেছেন, আমি কোনো দলের লোক না। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন দলীয় প্রভাব মুক্ত রাখার চেষ্টা করব। সবাইকে বলে দিচ্ছি- কেউ কোনো দলীয় তদবির নিয়ে আমার কাছে আসবেন না।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর গুলশান ২ নম্বরে ডিএনসিসির নগর ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ সব কথা বলেন তিনি।
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি আমার টিমের সবার সঙ্গে সারা রাত ঢাকা ঘুরেছি। এসময় বিভিন্ন স্থানে সমস্যা নির্ধারণের চেষ্টা করেছি। আশা করি আগামী ৮ মাস পর আপনারা বলতে পারবেন যে কিছু একটা করেছি। আগে যারা দায়িত্বে ছিল তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিন্তু তারা তেমন কিছু করতে পারেনি। আমি তাদের মতো প্রতিশ্রুতি দেব না, যা করব আপনাদের সঙ্গে নিয়েই করব। সব দৃশ্যমান থাকবে।
তিনি বলেন, ঢাকার পরিবেশ রক্ষা, জনস্বাস্থ্য রক্ষা এবং জলাবদ্ধতা নিরসন- এ তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করা হবে ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। এবার জলাবদ্ধতা সহনশীল থাকবে এটা বলতে পারি। তবে একেবারে জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয়। আর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা আমাদের কাজ শুরু করে দিয়েছি। ফগার মেশিন দিয়ে মশা মরে না। তাই ভিন্ন উপায়ে যেন মশা নিধন করা যায় আমরা সে পরিকল্পনাটাই করছি।
তিনি বলেন, রাজপথ থেকে ব্যানার-পোস্টার অপসারণ করা হবে। পিভিসি ব্যানার সম্পূর্ণ নিষেধ, এটি পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দেয়ালে দেয়ালে আঁকা জুলাই গ্রাফিতি রক্ষা করা হবে। পোস্টার-ব্যানার লাগালে জরিমানা করা হবে। এ ছাড়া ডিএনসিসি দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ডিএনসিসির কার্যক্রম পরিচালনায় তিনটি অবৈতনিক উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসক। তিনি বলেন, শিগগিরই বায়োডাইভারসিটি (জীববৈচিত্র্য) কমিটি, ডায়াসপোরা (প্রবাসী) কমিটি এবং সাধারণ কমিটি গঠন করা হবে।
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, এ শহর আমার, আপনার, আমাদের সবার। অদম্য, সৃজনশীল আর সংহতির এক শহর। এ শহরটিকে মানবিক ও ন্যায়ের শহর হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে বহু বছর ধরে আমি আপনাদের সঙ্গে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। ঢাকা যেন শুধু ইট-পাথরের শহর হয়ে না থাকে বরং এটি এমন একটি প্রাণবন্ত শহর হয়, যেখানে মানুষ ও প্রকৃতি একে অপরের থেকে আলাদা নয়, যেখানে শহরের স্পন্দন নানা জীবন ও সংস্কৃতির মিলনে তৈরি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে আমার ভূমিকা হবে সে পথচলার আরেক ধাপ।
ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, আমি প্রথমে একজন ঢাকাবাসী, তারপর একজন প্রশাসক। আমি এমন প্রশাসনের ধারণায় বিশ্বাস করি না যেখানে প্রশাসক সবার ওপরে বসে থাকেন। আমাদের নগর শাসনের অনেক কিছুই ব্রিটিশ আমল থেকে এসেছে, যা আমরা এখনো অনুসরণ করে যাচ্ছি। এখন সময় এসেছে সেই পুরনো ধাঁচ ভেঙে ফেলার এবং মানুষের অংশগ্রহণের ওপর ভিত্তি করে নতুনভাবে নগর শাসন পরিকল্পনা করার। আমি আপনাদের আমার সঙ্গে এ উদ্যোগে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাই। আপনারা গঠনমূলক সমালোচনা করুন, আপনার ভাবনাগুলো শেয়ার করুন এবং বদলের পথে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে আমাদের সাহায্য করুন।
ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, মোহাম্মদপুরের বছিলায় হাইক্কার খাল উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সরেজমিনে গিয়েছি। সীমানা নির্ধারণ ও উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। হাইক্কার খালটি পূর্বের মতো রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধসংলগ্ন কবরস্থানের মধ্য দিয়ে লাউতলা খাল ও রামচন্দ্রপুর খালের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
এ সময় তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে উত্তরখান এলাকায় গিয়েছি। ৩টি স্থানে সীমানা নির্ধারণ ও উচ্ছেদ করে ১টি পার্ক, ১টি খেলার মাঠ ও ১টি কমিউনিটি কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। পার্কটি নির্মাণ হবে তেরমুখ ব্রিজের পাশে। আমাইয়া, কাঁচকুড়ায় একটি মাঠ ও একটি কমিউনিটি কমপ্লেক্স নির্মাণ হবে।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান, সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগে. জেনা. মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. জেনা. ইমরুল কায়েস চৌধুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এবিএম সামসুল আলম এবং অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এর আগে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ গুলশান নগরভবনের নিচতলায় প্রবেশপথের দেয়ালে স্থাপিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অমর স্মৃতি শিরোনামে ফটো গ্যালারি উদ্বোধন করেন। ফটো গ্যালারিতে ছবির মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনা প্রবাহ উপস্থাপন করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন