দুর্নীতিবাজ প্রকাশকদের শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং তাদের বিচারের দাবিতে সৃজনশীল প্রকাশক ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি অমর একুশে বইমেলা এবং বই ক্রয়ে সরকারি নীতিমালা শীর্ষক এক সংলাপের আয়োজন করেছে।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে জনসন রোডের স্টার হোটেলে এ সংলাপের আয়োজন করে তারা।
সংলাপে বাংলাদেশের সৃজনশীল প্রকাশকরা বলেছেন, রাজনৈতিক এবং দলীয় বিবেচনায় নয় বইয়ের গুণগত মান বিচারে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে মূল্যায়ন করা উচিত। বিগত ১৭ বছরে যারা রাজনীতি এবং দলীয় পরিচয়ে সরকারি প্রকল্পের বই ক্রয়ে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং সরকারকে এর তদন্তের অনুরোধ জানাবে সৃজনশীল ওয়ার্কিং কমিটি।
সংলাপ অনুষ্ঠানে বইমেলায় প্যাভিলিয়ন পদ্ধতি বাতিল এবং স্টল ভাড়া কমানো এবং পাঠকদের জন্য ভালো বই মুদ্রণের আহ্বান জানানো হয়। অনুষ্ঠানে শুরুতে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের এবং সিনিয়র প্রকাশক আলমগীর রহমানের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রকাশকরা বলেন, বইমেলায় রাজনীতিক বিবেচনায় স্টল ও এনজিও প্রতিষ্ঠান এবং খাবারের দোকান বন্ধ করতে হবে। আলাদা শিশু চত্বর বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে বাংলা একাডেমির স্টল এবং ৭০ কমিশনে তাদের বই বিক্রি। বাংলা একাডেমির ৩২ সদস্যের কমিটিতে ১৬ জন রাখতে হবে প্রকাশক। মন্ত্রী, আমলা এবং দলবাজ লেখকদের বই সরকারি ক্রয়ে ক্রয় যাবে না। জেলা ও বিভাগীয় বইমেলার নামে লুটপাট বন্ধ করতে হবে।
গত ১৭ বছর যে সিন্টিকেট চক্রটি সরকারি প্রকল্প বই ক্রয়ে লুটপাট করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হবে। এসইডিপি প্রকল্পে অনিয়মে মন্ত্রী, সচিব এবং প্রকল্পের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিচার করতে হবে। গত ১৫ বছরেই কেবল গ্রন্থকেন্দ্রে মন্ত্রী ও সচিবের কোটায় ১০ কোটি টাকার বই ক্রয় করা হয়েছে লুটপাটকারী প্রকাশকদের কাছ থেকে। এখানে সরকারি টাকা দিয়ে বই ক্রয় হয় না, ক্রয় করা হয় পছন্দের লেখককে, পছন্দের প্রকাশক এবং মানহীন বই। মন্ত্রী আমলাদের যারা খুশি করতে পেরেছেন তাদেরই বই তারা কিনেছেন। সাধারণ প্রকাশকরা বই বিক্রি করতে পারছেন না। প্রকাশনা শিল্পকে বাঁচানোর জন্য সরকারের কাছে তারা দাবি জানান।
বাংলাদেশে প্রকাশনা শিল্পের পাইওনিয়ার ইউপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন কাকলি প্রকাশনীর সেলিম আহমেদ, ঐতিহ্যের আরিফুর রহমান নাঈম, সূচীপত্রের সাঈদ বারী, আদর্শ’র মাহাবুব রাহমান, আবিষ্কার’র দেলোয়ার হাসান, বাতিঘর’র দীপঙ্কর দাস, এডন’র জাকির হোসেন, ভাষাচিত্র’র খন্দকার সোহেল, উৎস’র সেলিম আহমেদ, সৃজনী’র মশিউর রহমান, রয়েল পাবলিকেশনের জামাল উদ্দিন, শাহজি প্রকাশনীর শরিফ শাহজি, প্রতিভা প্রকাশের মঈন মুরসারিন, কলি প্রকাশনীর মহিউদ্দিন কলি, মুক্তচিন্তার শিহাব বাহাদুর, মহাকাশ এর মনিরুজ্জামান, অ’র আবু বকর সিদ্দিক, ভাষা প্রকাশের মিজানুর রহমানসহ ২৩ জন প্রকাশক। তারা তাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
সংলাপ অনুষ্ঠানে অনন্যা’র মনিরুল হক, অনুপম’র মিলন নাথ, সংবেদ’র পারভেজ হোসেন, হাসি প্রকাশনীর হেলাল উদ্দিন, ইতি প্রকাশনী’র জহির দিপ্তীসহ ১১০ জন সৃজনশীল প্রকাশক উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত সংখ্যা ১৭০।
মন্তব্য করুন