গ্রাহকের বীমা দাবির টাকা পরিশোধে কোম্পানির টালবাহানার সুযোগ আর থাকবে না। এ ধরনের অনিয়ম অচিরেই শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।
জাতীয় বীমা দিবস উপলক্ষে খাত সম্পর্কিত নানা ইস্যুতে কালবেলার সঙ্গে আলাপচারিতায় এমন দাবি করেছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট ও সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন।
তিনি বলেন, বীমা খাতের দীর্ঘদিনের দুর্নাম ছিল বীমা দাবি পরিশোধ না করা। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বীমা খাত ছিল সবচেয়ে অবহেলিত এবং দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে নতুন করে বীমা খাতে নজর দিয়েছেন। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গঠন করে বীমা খাতকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে এসেছেন। এখন বীমা কোম্পানিগুলো জবাবদিহিতার আওতায় এসেছে। মানুষের মন থেকে বীমা নিয়ে যে আস্থাহীনতা ছিল, তা দিনে দিনে দূর হতে চলেছে। গ্রাহকরাও বীমা সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে শুরু করেছেন।
দাবি করেন, এভাবে সবকিছুতেই ইতিবাচক অগ্রগতির ফলে বীমা দাবির টাকা পরিশোধে কোম্পানির টালবাহানা করার সুযোগও এখন সংকুচিত হয়ে এসেছে। বর্তমানে এ পরিস্থিতির এতটাই উন্নতি হয়েছে, সাত দিনের মধ্যেও বীমা দাবি পরিশোধ করছে কোনো কোনো কোম্পানি। বাকিরাও সঠিক সময়ের মধ্যেই নিষ্পত্তি করছে বীমা দাবি। সামনের দিনগুলোতে এ পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। এরই মধ্যে বীমা খাতে অটোমেশনের কাজ শুরু হয়েছে। এ অটোমেশন বাস্তবায়ন হলে বীমা খাতের অনিয়ম শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। এর পাশাপাশি বীমার বিধিবিধান ও প্রবিধানগুলো আরও বীমা সহায়ক ও গ্রাহকবান্ধব করা হচ্ছে। ফলে চাইলেই কেউ আর বীমা খাতে অনিয়ম করতে পারবে না।
Link a Story
বীমার স্বচ্ছতায় ডিজিটাইজেশনে বেশি মনোযোগ
জাতীয় বীমা দিবস পালন প্রসঙ্গে শেখ কবির হোসেন বলেন, একসময় জাতীয় বীমা দিবস ‘খ’ ক্যাটাগরিতে পালিত হতো। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বললাম, বঙ্গবন্ধু বীমা খাতে কাজ করেছেন। আমাদের দিবস কেন ‘খ’ ক্যাটাগরিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করার পর তিনি বীমা দিবসকে ‘ক’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করেন। ফলে এবার বীমা দিবস ‘ক’-এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
দেশে জনসংখ্যা ও অর্থনীতির আকার বিবেচনায় এখনো বীমা খাত পিছিয়ে—এমন প্রশ্নের জবাবে বীমা খাতের এ শীর্ষ নেতা বলেন, এটা ঠিক, বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় আমাদের বীমা খাত পিছিয়ে। বীমা পণ্যের পরিধিও কম। এর জন্য মূলত সাধারণ মানুষের মানসিকতা ও স্বাধীনতা-উত্তর সরকারগুলোর খাতটি সম্পর্কে অজ্ঞতাই দায়ী। আশার বিষয় হলো, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বীমা খাত এগিয়ে নিতে এখন তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাল ধরেছেন। তাই অপেক্ষায় থাকুন, আগামীতে এ খাতটিই বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও সক্ষমতা জানান দেবে।
বীমা পণ্যের পরিধি বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশে প্রতিটি স্থাপনার বীমা কাভারেজ রয়েছে, কিন্তু আমাদের নেই। প্রতিটি স্থাপনাকে বীমার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সেটি নিয়ে আইডিআরএ এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। এটা করা গেলে দেশে বিভিন্ন স্থাপনারও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। সেই সঙ্গে আর্থিক নিরাপত্তাও মিলবে। এ প্রসঙ্গে শেখ কবির সম্প্রতি গুলশানের অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, গুলশানের এ ভবনের যদি ইন্স্যুরেন্স করা থাকত, তাহলে প্রথমে বিবেচনায় আসত ভবনটির আয়ুষ্কাল কত? ফায়ার সেফটি ঠিক আছে কিনা। কারণ এসব শর্ত ফুলফিল না হলে বীমা কাভারেজ পাবে না। এতে স্থাপনাও সুরক্ষিত হতো, আর্থিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত হতো।
সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের এ চেয়ারম্যান বলেন, দেশে ক্রমবর্ধমান এ অর্থনীতিতে বীমা খাতকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। আমেরিকাতে বড় বড় প্রকল্পে বীমা খাতের বিনিয়োগ রয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে জাতীয় বাজেটে বীমার প্রিমিয়াম কত আসতে পারে তার ওপর নির্ভর করে উন্নয়ন বাজেট প্রণয়ন করা হয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, বীমা খাতকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট তৈরি করা হয়। আগামীতে আমাদেরও সে পথেই যেতে হবে।