
দেশের কৃষকদের দেওয়া কৃষিঋণের সুদ মওকুফের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সংরক্ষিত আসনের সদস্য নাজমা আকতারের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রী জানান, কৃষিঋণের সুদ মওকুফের কোনো পরিকল্পনা নেই। এর কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক আমানতকারীদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে কৃষকদের ঋণ দেয়। আমানতকারীদের ব্যাংকের সুদ দিতে হয় বলে প্রচলিত নিয়মে ব্যাংকের পক্ষে কৃষকদের মাঝে দেওয়া ঋণের সুদ মওকুফ করা সম্ভব হয় না।
সরকারি দলের হাবিবর রহমানের প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ঋণ পাওয়া যায়নি। একটি ঋণের বিষয়ে আইএমএফ-এর সাথে আলোচনা চলমান রয়েছে। তবে চলতি অর্থ বছরে বিশ্বব্যাংক থেকে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পাওয়া গেছে। এই ঋণ ৫ বছরের গ্রেস প্রিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধযোগ্য।
এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে চলতি অর্থ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত জাপান সরকার ৯২১ দশমিক ৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড় করেছে।
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে ডলার সংকট কমাতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা সংসদে তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, ডমেস্টিক ব্যাংকিং ইউনিট (স্থানীয় ব্যাংক)-কে তাদের অফশোর ব্যাংকিং অপারেশন থেকে বৈদেশিক মুদ্রা তহবিল সংগ্রহের প্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে, যা ৩০ জুন ২০২৩ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
রমজান মাসে ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি ও খেজুরের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখাসহ পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে এসব পণ্য ৯০ দিনের বিলম্ব মূল্য পরিশোধ ব্যবস্থায় আমদানির সুযোগ প্রদান করা হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। যা ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সহজীকরণের লক্ষ্যে এ দেশের মুদ্রার সঙ্গে লেনদেনের সুযোগ প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এম আবদুল লতিফের আরেক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির হার তৎপূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা টাকার অঙ্কে ১২ হাজার ৩৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রয়ের পরিমাণ ১ লাখ ৩ হাজার ৬৫২ কোটি ৮ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৯১ হাজার ২৬৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
তফসিলি ব্যাংকগুলোর জানুয়ারি-জুন, ২০২২ সময়ে সিএসআর কার্যক্রমের প্রেক্ষিতে শীর্ষ ব্যয়কারী ১০টি ব্যাংক হলো- ইসলামী ব্যাংক ২০২ কোটি ১৯ লাখ, ডাচ-বাংলা ৩৯ কোটি ৭ লাখ, দি প্রিমিয়ার ব্যাংক ২৯ কোটি ৯৫ লাখ, এক্সিম ব্যাংক ২৮ কোটি ৩৯ লাখ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ২২ কোটি ১৬ লাখ, শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক ২১ কোটি ৬৫ লাখ, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ১৯ কোটি ৮১ লাখ, ঢাকা ব্যাংক ১৪ কোটি ৯৬ লাখ, প্রাইম ব্যাংক ১৪ কোটি ৬৩ এবং ব্র্যাক ব্যাংক ১৪ কোটি ৪৬ লাথ টাকা ব্যয় করে।
ময়মনসিংহ-১১ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে ডলার রিজার্ভের পরিমাণ ৩২ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য লুৎফুন নেসা খানের প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বিদেশে (সিঙ্গাপুর, মালেয়শিয়া, হংকং, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ইত্যাদি) ফ্ল্যাট বা বাড়ি ক্রয় অথবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে অর্থপাচারবিষয়ক বেশকিছু মামলা বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তাধীন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কর্তৃক পাচার সংশ্লিষ্ট বেশকিছু মামলা চলমান রয়েছে। অর্থপাচার রোধ এবং পাচারকৃত অর্থ বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর এবং এ লক্ষ্যে সরকারের সব সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।