পাবনায় আওয়ামী লীগ নেতা শামীম হোসেন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ইমরান হোসেনের জামিনের পর তাকে পুলিশি পাহারায় বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্ত্রী। তিনি জানান, আসামির বাড়িতে পুলিশের নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে পাবনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন নিহত আওয়ামী লীগ নেতা শামীমের স্ত্রী রিক্তা আরা খাতুন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্বামীকে যে অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, র্যাব সেই অস্ত্র উদ্ধার করলেও তা চার্জশিটভুক্ত করেনি পুলিশ। আসামিদের মামলা থেকে বাঁচানোর জন্য মামলাটি পুলিশ দুর্বল করে দিয়েছে।’
তিনি প্রশ্ন রাখেন, আসামি ইমরান জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর কী করে পুলিশ তাকে পাহারা দিয়ে বাড়ি নিয়ে যায়। কীভাবে তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ওই বাড়িতে পুলিশি পাহারা বসিয়েছে।
রিক্তা আরা অভিযোগ করেন, হত্যাকারীরা মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। সাক্ষীদের শাসানো হচ্ছে যাতে তারা সাক্ষ্য না দেন।
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি হেমায়েতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম নিলুর শ্যালক পুলিশের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা হত্যাকারীদের বাঁচাতে এ মামলায় কলকাঠি নাড়াচ্ছেন। তার ইশারায় পুলিশ মামলা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।’
দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতসহ চারটি দাবি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন রিক্তা আরা।
২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ দফার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দুদিন পর ২৮ ডিসেম্বর নাজিরপুর হাটপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান প্রয়াত তরিকুল ইসলাম নিলু ও তার ছেলে ইমরান হোসেনসহ তাদের অনুসারীরা শামীমের ওপর হামলা চালিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
এ ঘটনায় শামীমের বাবা নুর আলী প্রামাণিক বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় দুই নম্বর আসামি ছিলেন তরিকুল ইসলাম। গ্রেপ্তার হয়ে জামিনে মুক্তি পাওয়ার কয়েকদিন পর তিনি মারা যান। পরে প্রধান আসামি ইমরান পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
মামলার বাদীর অভিযোগ, গত ২৩ মার্চ ইমরান পাবনার আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। পরে তাকে পুলিশি পাহারায় বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। তার বাড়িতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, নিহতের বাবা নুর আলী প্রামাণিক, চাচা আবু দাউদ রনি, চাচাতো ভাই রাশেদ হাসান মিঠুন, আত্মীয় পাভেল হাসান জাহাঙ্গীর প্রমুখ।
এ বিষয়ে পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী বলেন, যেহেতু এটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড। তাই আসামি জামিনে বের হয়ে তার বাড়িতে ফেরার পর একটা সমস্যা তৈরি হতে পারে- এমন তথ্য ছিল আমাদের কাছে। সে কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে ওই এলাকায় পুলিশের একটি টহল দল মোতায়েন করা হয়েছিল। যাতে মামলার বাদী-বিবাদীর মধ্যে কোনো ঘটনা না ঘটে। আসামিকে বাড়িতে তুলে দেওয়া বা শুধু আসামির বাড়িতে নিরাপত্তা দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। পুলিশের অবস্থানকে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ মোতায়েন ছিল, অন্য কোনো কারণে নয়।