
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একজন মেয়র পদপ্রার্থী সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা খরচ করতে পারেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় পদপ্রার্থী আজমত উল্লা খান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ৩০ লাখ টাকাই নিজের পেশা ও ব্যবসা থেকে খরচ করবেন। জাতীয় প্রার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন নির্বাচনের খরচের ২৫ লাখ টাকা নেবেন স্ত্রী ও মেয়ের কাছ থেকে। স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম খরচ করবেন শ্বশুরের কাছ থেকে ৫ লাখ এবং নিজের ঘর ভাড়া ও চাচার কাছ থেকে খরচ করবেন ২১ লাখ টাকা। তিনি বাকি চার লাখ নেবেন ধার করে।
এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান দলের অনুদানের টাকায় এবং গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম কৃষি ও সাধারণ ব্যবসা থেকে এবং জাকের পার্টির রাজু আহমেদ ধারদেনা করে খরচ করবেন। নির্বাচনের অন্য মেয়র পদপ্রার্থীরাও কেউ নিজের আয় থেকে, কেউ জমি বিক্রি করে, আবার কেউ আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার নিয়ে নির্বাচন করবেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের হলফনামার সঙ্গে নির্বাচনের খরচ ও প্রাপ্তির উৎস-সম্পর্কিত ফরমে প্রার্থীরা নিজেই এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, সিটি নির্বাচনে একজন মেয়র পদপ্রার্থী ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে পারবেন। কোথায় থেকে তারা টাকা পাবেন, কীভাবে খরচ করবেন—সেটি সুস্পষ্টভাবে নির্বাচন কমিশনের ফরমে উল্লেখ করেছেন। নির্বাচনের পর আমরা তাদের হিসাব-নিকাশ খতিয়ে দেখব।
সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আজমত উল্লা খান নির্বাচন কমিশনে যে হিসাব দেখিয়েছেন, সে অনুযায়ী তিনি ৩০ লাখ টাকা নির্বাচনে ব্যয় করবেন। তিনি এই টাকা পুরোটাই নিজের আইন পেশা থেকে আয় হওয়া টাকা থেকে খরচ করবেন।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন খরচ করবেন ৩০ লাখ টাকা। অর্থ প্রাপ্তির উৎস দেখিয়েছেন নিজের ব্যবসা থেকে ৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া স্ত্রী নূর জাহান তার ব্যবসা থেকে দেবেন ১০ লাখ এবং তার প্রবাসী মেয়ে নাফিয়াতুজ সাবরিনা চৌধুরী তার ব্যবসা থেকে দেবেন ১৫ লাখ টাকা।
সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন নিজের ব্যবসা থেকে খরচ করবেন ৩০ লাখ টাকা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম নিজের গৃহসম্পত্তি ভাড়া থেকে খরচ করবেন ১৮ লাখ। শ্বশুর এনামুল হক তার ব্যবসা থেকে দেবেন ৫ লাখ, চাচা নাজিম সরকার দেবেন ৩ লাখ, আশরাফুল নামের একজনের কাছ থেকে ধার নেবেন ২ লাখ এবং মতিউর রহমান নামের এক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় দেবেন ২ লাখ। তাকে স্বেচ্ছা বা ধারে টাকা দেবেন দুইজন। তাদের নাম উল্লেখ থাকলেও পরিচয় উল্লেখ নেই।
ইসলামিক আন্দোলন বাংলাদেশ দলের মেয়র পদপ্রার্থী গাজী আতাউর রহমান নির্বাচনে ব্যয় করবেন ৯ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে নিজের শিক্ষকতা পেশা থেকে পাওয়া ৩ লাখ, ধার হিসেবে ভাই মোরশেদ আলম দেবেন এক লাখ। এ ছাড়া তার দল থেকে অনুদান হিসেবে দিয়েছে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
গণফ্রন্টের মেয়র পদপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম নির্বাচনে ব্যয় করবেন ৩ লাখ টাকা। নিজে দেবেন ২ লাখ টাকা ও গাজীপুরের নলজানি এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম দেবেন ৫০ হাজার ও মতিঝিল এলাকার বাসিন্দা দুলাল মিয়া দেবেন ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া জাকের পার্টির দলীয় প্রার্থী রাজু আহমেদ নির্বাচনে খরচ করবেন ২ লাখ টাকা। এর মধ্যে নিজের ব্যবসা থেকে ১ লাখ এবং স্বেচ্ছায় তার মা রোজিনা বেগম দেবেন ৫০ হাজার ও জাহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি দেবেন ৩০ হাজার, সুজন নামের একজন দেবেন ২০ হাজার।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন অর রশিদ নির্বাচনে খরচ করবেন ১৬ লাখ টাকা। পুরোটাই দেবেন তার নিজ ব্যবসা থেকে।
কোন খাতে কার কত ব্যয়
আজমত উল্লা খান নির্বাচনী পোস্টার খরচ ৪ লাখ ৫০ হাজার, ক্যাম্প বা অফিস খরচ ৪০ হাজার, প্রার্থী নিজের এজেন্টদের যাতায়াত খরচ ৬০ হাজার। ঘরোয়া বৈঠক বা সভা খরচ ২ লাখ ৮৭ হাজার। প্রচারপত্র (লিফলেট) খরচ ২ লাখ টাকা। প্রচারপত্র (হ্যান্ডবিল) ৬ লাখ। ডিজিটাল ব্যনার ১ লাখ ৬৫ হাজার। পথসভা ১১৪ টি ব্যয় ১ লাখ ১৪ হাজার। মাইকে প্রচার ৬ লাখ ৮৪ হাজার। প্রতীক খরচ ১ লাখ ১৪ হাজার। অফিস আপ্যায়ন ৩০ হাজার, ৭৫০ জন কর্মী খরচ ২ লাখ ১৩ হাজার ৭৫০ টাকা।
জায়েদা খাতুনের ব্যয়ের খাত দেখিয়েছেন, পোস্টারের জন্য ৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা, নির্বাচনী ক্যাম্পে ও কর্মীদের জন্য খরচ ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রার্থীর কেন্দ্রীয় ক্যাম্প বা অফিস খরচ, কর্মীদেরসহ ২ লাখ ৩০ হাজার। প্রার্থীর যাতায়াত খরচ ২ লাখ ৫০ হাজার। ঘরোয়া বৈঠক ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা। প্রচারপত্র (লিফলেট) ছাপা হবে ১০ লাখ পিস, এর জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৮ লাখ। পথসভা ৫৭টির জন্য খরচ ৪৫ হাজার ৬০০, মাইকে প্রচারে ৯৬ হাজার ৯০০, অফিস আপ্যায়ন ১ লাখ ৭৪ হাজার ও কর্মী সংখ্যা ৩ হাজার ৪২০ জন। তাদের খরচ ৫ লাখ ১৩ হাজার।
সরকার শাহনুর ইসলাম ব্যয়ের খাত দেখিয়েছেন এক লাখ পোস্টারের জন্য ৩ লাখ, ৫৭টি ক্যাম্পের জন্য ২ লাখ, কেন্দ্রীয় ক্যাম্প খরচ ৫০ হাজার, ঘরোয়া বৈঠক ও সভা খরচ ৩ লাখ ৫০ হাজার, পাঁচ লাখ প্রচারপত্র লিফলেট খরচ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। হ্যান্ডবিলি ৫০ হাজার ছাপা হবে খরচ ধরা হয়েছে ৪০ হাজার, ব্যানার ১ হাজারটির জন্য খরচ ২ লাখ ৫০ হাজার, পথসভা ৫০ হাজার, মাইক খরচ সাড়ে ২ লাখ ৫০ হাজার। অফিস আপ্যায়ন ৯০ হাজার, কর্মী খরচ ১ লাখ ৫০ হাজার। প্রচার খরচ ৪০ হাজার এবং বিবিধ খরচ ১ লাখ টাকা।
জাতীয় প্রার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিনের পোস্টারের জন্য ৬০ হাজার টাকা, নির্বাচনী ক্যাম্পে ও কর্মীদের জন্য খরচ ৪ লাখ টাকা। প্রার্থীর কেন্দ্রীয় ক্যাম্প বা অফিস খরচ ৩ লাখ টাকা, কর্মীদেরসহ ২ লাখ। প্রার্থীর যাতায়াত খরচ ৭০ হাজার। ঘরোয়া বৈঠক ৫০ হাজার ৫০০ টাকা। প্রচারপত্র (লিফলেট) ছাপা খরচ ধরা হয়েছে ২ লাখ। পথসভা ৬০টির জন্য খরচ ৬০ হাজার টাকা, মাইকে প্রচারে এক লাখ ১৪ হাজার। অফিস আপ্যায়ন ২০ হাজার। ডিজিটাল ব্যানার ১ লাখ ৬৫ হাজার, ১১৪টি পথসভার জন্য ধরা হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার টাকা। প্রতীক খরচ ১ লাখ ১৪ হাজার, হ্যান্ডবিলি খরচ ৬ লাখ। এ ছাড়া কর্মী খরচ ২ লাখ ১৭ হাজার ৭০০ টাকা।
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমানের ব্যয় পোস্টার ১ লাখ ৭০ হাজার, নির্বাচনী ক্যাম্প এক লাখ ২০ হাজার, প্রার্থীর যাতায়াত খরচ ৫ লাখ, ঘরোয়া বৈঠক বা পথসভায় খরচ করবেন ২০ হাজার, প্রচারপত্র (লিফেলেট) এক লাখ ২০ হাজার, হ্যান্ডবিল ৬০ হাজার, ব্যানার খরচ ৫০ হাজার, প্রতীক খরচ ৩০ হাজার, মাইকিং ৬০ হাজার, আপ্যায়ন খরচ করবেন ৪০ হাজার এবং কর্মী খরচ রয়েছে এক লাখ ২০ হাজার।
গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলামের পোস্টার খরচ ৩০ হাজার, দুটি নির্বাচনী ক্যাম্পের খরচ ২০ হাজার, অফিস খরচ ১৭ হাজার, লিফলেট খরচ ৩ হাজার, ডিজিটাল ব্যানার খরচ এক লাখ ২৭ হাজার, প্রতীক খরচ ৩ হাজার, আপ্যায়ন খরচ ৫০ হাজার, ৮০ জন কর্মী খরচ ৪০ হাজার ও বিবিধ খরচ ১০ হাজার।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন অর রশিদের পোস্টার খরচ এক লাখ ৫০ হাজার, ৫৮টি নির্বাচনী ক্যাম্পের খরচ ২ লাখ ২৪ হাজার, ক্যাম্পের খরচ ৩৫ হাজার, প্রার্থীর যাতায়াত খরচ ১ লাখ ৪০ হাজার, ঘরোয়া বৈঠক ও পথসভা খরচ করবেন ২ লাখ ৯ হাজার, ৫৫ হাজার লিফলেটে খরচ ২৫ হাজার, হ্যান্ডবিল খরচ ২৫ হাজার, ব্যানার খরচ ৪৩ হাজার, ১১৪টি পথসভায় খরচ করবেন ৫৭ হাজার, পোর্ট্রেট খরচ ২ লাখ ৮৫ হাজার, প্রতীক খরচ ৩০ হাজার, আপ্যায়ন খরচ ৭৫ হাজার, কর্মী খরচ ৪৮ হাজার, প্রচারে এক লাখ ও বিবিধ খরচ রয়েছে ৬৫ হাজার।
জাকের পার্টির রাজু আহমেদের পোস্টার খরচ ৪৫ হাজার, ক্যাম্প খরচ ৩০ হাজার, অফিস খরচ ৫ হাজার, যাতায়াত খরচ ৩০ হাজার, ঘরোয়া বৈঠক ও পথসভা ৫ হাজার, প্রচারপত্র (লিফলেট) ৬২ হাজার টাকা। পথসভা ৫ হাজার টাকা, মাইক ২৭ হাজার টাকা, বিবিধ খরচ ১৯ হাজার।
মো. সানাউল্লাহর পোস্টার খরচ দেড় লাখ, অফিস খরচ ৪ লাখ ২০ হাজার, ক্যাম্প খরচ ১ লাখ ৬০ হাজার, যাতায়াত খরচ সাড়ে ৩ লাখ, ঘরোয়া বৈঠক ১ লাখ ৭০ হাজার, প্রচারপত্র ১ লাখ, প্রতীক খরচ ৫০ হাজার, আপ্যায়ন ২ লাখ, কর্মী খরচ ৪ লাখ ও বিবিধ খরচ আছে ১ লাখ ৮০ হাজার।