চরমোনাই মাহফিল দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে নয়, বরং পথভোলা মানুষকে আল্লাহর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মাওলানা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর চরমোনাই)। তিনি বলেন, ‘এখানে দুনিয়াবি কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আসার প্রয়োজন নেই। যদি এমন কেউ এসে থাকেন তবে নিয়ত পরিবর্তন করে আত্মশুদ্ধির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।’
বরিশালে চরমোনাই’র ৯৯ তম বার্ষিক ফাল্গুন মাহফিল আনুষ্ঠানিকভাবে আজ বুধবার শুরু হয়েছে। মাহফিলে এসব কথা বলেন তিনি।
আজ বুধবার বাদ জোহর চরমোনাই মাদ্রাসার মূল মাঠসহ ৬টি মাঠ নিয়ে অনুষ্ঠিত চরমোনাইর বার্ষিক মাহফিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম আরও বলেন, ‘যারা চরমোনাইতে নতুন এসেছেন, তারা দুনিয়ার ধ্যান-খেয়াল বিদায় করে দিয়ে আখেরাতের খেয়াল-ধ্যান অন্তরে জায়গা দেন। দিল থেকে বড়ত্ব এবং আমিত্ব ভাব বের করে দিয়ে আল্লাহর কুদরতি পায়ে নিজেকে বিলীন করে দিতে হবে। সদা-সর্বদা আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে দিলকে তরতাজা রেখে আল্লাহর ওলি হয়ে চরমোনাই থেকে বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।’
চরমোনাই পীর তার উদ্বোধনী বয়ান শেষে মাহফিলের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে আলোচনা করেন। ওই সময় মাহফিলে আগত মুসল্লিদের ৬ হাজার হালকায় বিভক্ত করে হাতে-কলমে সালাত ও ইসলামের বুনিয়াদি বিষয়ে বাস্তব প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ বছর মাহফিলে ভারতের দেওবন্দ, সৌদি আরব ও পাকিস্তানের বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরাম অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান পেশ করবেন।
গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে কওমি মাদরাসার সম্মিলিত শিক্ষা বোর্ড আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতুল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও বেফাকের সভাপতি আল্লামা মাহমুদুল হাসান শায়খে যাত্রাবাড়ি চরমোনাই মাদ্রাসায় উপস্থিত হয়ে মাহফিলের সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন।
এ বছর মাহফিলে আগত মুসল্লিদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ১০০ শয্যা বিশিষ্ট অস্থায়ী মাহফিল হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এতে ১১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে আরও ৪০ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে চিকিৎসা সেবা পরিচালিত হচ্ছে। ৬টি অ্যাম্বুল্যান্স ও একটি স্পিডবোর্ড মাহফিল হাসপাতালের কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীকে মাহফিল হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য নিযুক্ত রয়েছে বিশেষ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী।
এ ছাড়া ছয়টি মাঠে মাহফিলের শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রায় ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করা হয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী। সারা দেশ থেকে আসা মুসল্লিদের খাবারের জন্য প্রত্যেকটি মাঠের চারিদিকে সুপেয় নিরাপদ পানির ব্যবস্থা রয়েছে।