দেশের উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর জেলায় তাপমাত্রা কমে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয় কনকনে হিমেল হাওয়া। সেই সঙ্গে ঘন কুয়াশা। কুয়াশা বেশি থাকায় দিনের বেশির ভাগ সময়ই সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগ।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, দিনাজপুরে গত সোমবার ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। পর দিন তাপমাত্রা মাত্র দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি লঘু নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হতে পারে। এতে বাড়তে পারে শীতের তীব্রতা। তিনি বলেন, এ সপ্তাহে এক থেকে দুটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে। জানুয়ারিতে বেশি থাকবে শীত। সে সময় কয়েক দফা শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে বাড়ছে শীতজনিত রোগ। এতে নাজেহাল শিশুসহ বয়স্করা। শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর-সর্দিসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। জেলার হাসপাতালগুলোয় বাড়ছে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা। হঠাৎ রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালে দায়িত্বরত নার্স ও চিকিৎসকরা। জেলার হাসপাতালগুলোর সূত্র জানাচ্ছে, শীতজনিত রোগের কারণে এক মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সি বেশির ভাগ শিশুই এখন জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
দিনাজপুর ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি বিছানায় শিশুরা চিকিৎসা নিচ্ছে। শয্যা না পেয়ে মেঝেতে বিছানা পেতে সেখানে রাখা হয়েছে অনেক শিশুকে। রোগীর চাপে নার্স ও চিকিৎসকরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। হাসপাতালের শিশু বিভাগে কর্মরত স্টাফ নার্স মোমেনা বেগম বলেন, এবার কোল্ড ডায়রিয়ায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তিন সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৪০-৫০টি শিশু নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে।
আড়াই মাস বয়সী একটি শিশু নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন মরিয়ম বেগম। বিরল উপজেলার ভাড়াডাঙ্গী এলাকা থেকে আসা এই নারী জানান, গত কয়েক দিন ধরে তার বাচ্চার সর্দি-কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট। হঠাৎ অবস্থার অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। শীতের কারণে নিউমোনিয়া হয়েছে বলে চিকিৎসক তাকে জানিয়েছেন।
দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকাল অফিসার ডা. সোহেল রানা বলেন, ‘বহির্বিভাগে প্রতিদিন শতাধিক শিশুকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডে ২০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ জন। গতকালও শিশু রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৭।’