বিল দিতে পারেনি পরিবার, নবজাতক বিক্রির অভিযোগ হাসপাতালের বিরুদ্ধে

নিউ এশিয়া ক্লিনিক অ্যান্ড প্যাথলজি।
নিউ এশিয়া ক্লিনিক অ্যান্ড প্যাথলজি।ছবি : সংগৃহীত

বিল পরিশোধ করতে না পারায় মা-বাবার কাছ থেকে নবজাতককে নিয়ে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার নিউ এশিয়া ক্লিনিক অ্যান্ড প্যাথলজি নামের হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটেছে।

অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের পরিচালক কাম ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম ওই নবজাতককে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির হাতে তুলে দিয়েছেন। এর মধ্যে প্রসূতির হাতে ১৪ হাজার টাকা দিয়ে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়।

এর মধ্যে বুধবার সন্ধ্যায় বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। পরে স্থানীয়রা সাংবাদিকদের খবর দেন। তথ্য সংগ্রহ করতে গণমাধ্যমকর্মীরা হাসপাতালে গেলে মালিকপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে।

ভুক্তভোগী মা প্রিয়া আক্তার (২২) ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার মালিডাঙ্গা গ্রামের মো. রাসেলের স্ত্রী। তিনি বলছেন, তার স্বামী দিনমজুর। তার সংসারে ফাতেমা আক্তার নামে দেড় বছরের একটি শিশুসন্তান রয়েছে। গত রোববার প্রসব ব্যথা নিয়ে শ্রীপুর চৌরাস্তার নিউ এশিয়া ক্লিনিক অ্যান্ড প্যাথলজিতে যান তিনি। সেখানে জাহাঙ্গীর আলম নামের একজন নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দেন। জাহাঙ্গীর জানান, প্রসূতির দ্রুত সিজার না করালে মা-সন্তান দুজনেরই সমস্যা হবে। অপারেশন করতে ১৫-১৬ হাজার টাকা লাগবে। কিন্তু তার স্বামী চেষ্টা করেও টাকা জোগাড় করতে পারেননি। একপর্যায়ে জাহাঙ্গীর প্রস্তাব দেন, নবজাতককে তার কথামতো তুলে দিলে নগদ টাকা দেবেন। ছেলে হলে ৫০ হাজার, মেয়ে হলে ৩০ হাজার টাকার আশ্বাস দেন তিনি। হাসপাতালের বিল পরিশোধেরও আশ্বাস দেন জাহাঙ্গীর। পরে তারা জাহাঙ্গীরের প্রস্তাবে রাজি হলে রাতেই প্রিয়া সিজারের মাধ্যমে কন্যাসন্তান জন্ম দেন।

প্রিয়া আক্তার আরও বলেন, পরদিন সোমবার তার কাছ থেকে কাগজে টিপসই নেওয়ার পর নবজাতককে নিয়ে যাওয়া হয়। জাহাঙ্গীর অজ্ঞাত এক ব্যক্তির হাতে নবজাতকটি তুলে দেন। কার কাছে তুলে দিয়েছেন জাহাঙ্গীর, তা শত চেষ্টা করেও জানতে পারেনি রাসেল দম্পতি। পরে জাহাঙ্গীর প্রিয়াকে ১৪ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে জানান, নবজাতকের জন্য ৩০ হাজার টাকা পেয়েছেন। তা থেকে ১৬ হাজার টাকা হাসপাতালের বিল হিসেবে কেটে রেখেছেন।

নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দেওয়া অভিযুক্ত ম্যানেজার কাম পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর সন্তান বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, রাসেল দম্পতি নিজেরাই তাদের সন্তান দত্তক দিয়েছেন।

এদিকে বিষয়টি জানা নেই দাবি করলেও পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেন হাসপাতালের মালিক মো. ফজলুল হক।

শ্রীপুর থানার ওসি আবুল ফজল মোহাম্মদ নাসিম জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। কেউ অভিযোগও করেনি। খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামান জানিয়েছেন, অভিযোগ প্রমাণ হলে হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com