শেরপুরের নালিতাবাড়িতে প্রেমের অমরকীর্তি হিসেবে উদাহরণ হয়ে আছে একটি দীঘি। ৬০ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই দীঘি তৈরির ঐতিহাসিক কোনো কারণ খুঁজে না পাওয়া গেলেও, লোকমুখে শোনা যায়- প্রেমের উপহার হিসেবে খনন করা হয়েছিল এ জলাধারটি।
কথিত আছে এক সামন্ত রাজা তার স্ত্রী কমলারাণীকে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের জন্য কিছু একটা জিনিস উপহার দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। রানি তখন রাজাকে বলেন, ‘ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে আপনি এমন কিছু দান করুন যা যুগ যুগ ধরে মানুষ মনে রাখবে।’ রাজা তখন সিদ্ধান্ত নেন- অবিরাম এক রাত এক দিন সুতা কাটা হবে। যে পরিমাণ সুতা হবে সেটির সমান লম্বা ও প্রশস্ত একটি দীঘি কাটা হবে। এলাকার জনগণ দীঘির পানি ব্যবহার করবে, রানিকে স্মরণ করবে। এরপর নির্মিত হয় বিশাল এক দীঘি।
লোকমুখে শোনা যায়, খননের পর দীঘিতে পানি ওঠেনি। কমলারাণী তখন স্বপ্নাদেশ পান, ‘গঙ্গাপূজা কর নরবলি দিয়া, তবেই উঠিবে দীঘি জলেতে ভরিয়া।’ পরে মহাধুমধামে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে দীঘির মাঝখানে গঙ্গাপূজার আয়োজন করা হয়। হঠাৎ বজ্রপাতের শব্দে দীঘিতে পানি উঠতে লাগল। লোকজন দৌড়ে পাড়ে উঠতে পাড়লেও দীঘির পানিতে রানি তলিয়ে গেলেন। কমলারাণী আর তীরে উঠতে পারেননি। সেই থেকে কমলারাণী বা সুতানাল দীঘি নামে পরিচিতি পায়।
আবার সাবেক এমপি ও মন্ত্রী অধ্যাপক আবদুস সালাম রচিত বই থেকে জানা যায়, দীঘিটি রানি বিরহিণী নামে পরিচিতি পায়। ১৯৪০ সালে সরকারি ভূমি জরিপে দীঘিটি বিরহিণী নামে রেকর্ড হয়। তবে দীঘিটি খননের সত্যিকার দিনক্ষণ ও ইতিহাস জানা যায়নি।
উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নে মধ্যমকুড়া গ্রামে দীঘিটি অবস্থিত। এটি উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার দূরে। দীঘিটি কেন্দ্র করে প্রতি বছর শৌখিন মাছ শিকারিদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। দূর-দূরান্ত থেকে মাছ শিকারি ও উৎসুক মানুষের আনাগোনায় এলাকার পরিবেশ হয়ে ওঠে উৎসবমুখর।
১৯৮৩ সালে এই দীঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে ‘সুতানালি দীঘিরপাড় ভূমিহীন মজাপুকুর সমবায় সমিতি।’ বর্তমানে সমিতির সদস্য সংখ্যা ১১৮ জন। সব সদস্যই দীঘির পাড়ে বসবাস করেন।