কুমিল্লার দাউদকান্দি সদরের উত্তর ইউনিয়নের কান্দারগাঁও গ্রাম থেকে গত শনিবার দুপুরে অপহৃত হয় ৬ বছরের শিশু তানিশা। ওই দিন বিকেলে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে আর বাড়িতে ফেরেনি সে। পরে শিশুটির চাচাকে ফোন করে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। সেই টাকা দিতে দেরি হওয়ায় হত্যা করে ভুট্টাক্ষেতে ফেলে রাখা হয় শিশুটিকে। গত শনিবার গভীর রাতে বাড়ির পাশের জমি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ধারণা, ছোট্ট শিশুটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
তানিশার চাচা ফয়সাল জানান, তার ভাই প্রবাসী রাসেল মিয়ার মেয়ে তানিশা। স্থানীয় কিন্ডারগার্টেনে প্রথম শ্রেণিতে পড়ত। শনিবার অপরিচিত
নাম্বার থেকে আমাকে ফোন করে ভাতিজি কোথায় জানতে চাওয়া হয়। উত্তরে বাড়িতে আছে বললে তারা বলে বাড়িতে নেই, আমাদের কাছে আছে। নিতে হলে দুই লাখ টাকা লাগবে। পরে বিষয়টি মেম্বারকে জানাই। তিনি পুলিশকে জানান। মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে ওই রাতেই মাহফুজকে আটক করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যে বাড়ির পাশের ভুট্টার জমিতে তানিশার মরদেহ পাওয়া যায়।
তানিশার মা শারমিন আক্তার জানান, পাশের বাড়ির মোর্শেদা ম্যাডামের কাছে প্রাইভেট পড়ত তানিশা। শনিবার প্রাইভেট পড়তে বের হয়ে গেলেও ম্যাডামের কাছে পৌঁছায়নি। পরে খবর পাই মেয়েকে অপহরণ করেছে। তারা ২ লাখ টাকা চায়। ২৫ হাজার টাকাও দেওয়া হয়েছে। তারপরও তারা আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে। এ সময় বারবার মূর্ছা যেতে থাকেন শারমিন। বলেন, আমার মেয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।
স্থানীয় মেম্বার শাজাহান মিয়া বলেন, শনিবার বিকেল ৩টার দিকে তানিশা নিখোঁজ হয়। পরে জানতে পারি তাকে অপহরণ করা হয়েছে। এরপর পুলিশের সহযোগিতায় রাতে ভুট্টাক্ষেত থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়।
দাউদকান্দি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীর ভূঞা বলেন, আমাদের ধারণা, ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে। আটক চারজনের নামসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনের নামে শিশুটির মা শারমিন আক্তার অভিযোগ দিয়েছেন। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দোষীদের ফাঁসির দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিক্ষাভ
এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বিকেলে হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে থানার সামনে তানিশার লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও স্থানীয়রা। সেখান থেকে লাশ নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিশ্বরোড এলাকায় এসে অবস্থান নেন তারা। বিক্ষোভকারীরা বলেন, হত্যাকারী মাহফুজ, আশিক, লিটন ও রতনকে পুলিশ আটক করেছে। আমরা তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির ফাঁসি চাই।
এ সময় মহাসড়কের উভয় পাশে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিনুল হাসান, পৌর মেয়র নাইম ইউসুফের আশ্বাসে মহাসড়ক থেকে সরে যান বিক্ষোভকারীরা।