জামালপুরে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে আহত করে পুলিশে সোপর্দ করার অভিযোগ উঠেছে পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানুর বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার রাতে জেলা শহরের পাথালিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা হলেন নূর হোসেন আবাহনী। তিনি জামালপুর পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি।
জানা যায়, গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আবাহনী নিজের ফেসবুক আইডিতে লাইভে এসে জামালপুর পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানুকে ‘ভূমিদুস্য, সন্ত্রাসী’ আখ্যায়িত করে জমি দখলসংক্রান্ত বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য দেন। মেয়রের অপকর্মের বিরুদ্ধে জনগণকে রাস্তায় দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। একইসঙ্গে তিনি পৌরসভার মধ্যবর্তী নির্বাচনও দাবি করেন। তার ওই লাইভ ভিডিওটি ফেসবুক মেসেঞ্জারে ছড়িয়ে পড়ে।
এতে বিক্ষুদ্ধ হয়ে একই দিন সন্ধ্যার দিকে মেয়রের লোকজন তাকে ধরে নিয়ে ব্যাপক নির্যাতন ও পিটিয়ে দুই পা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করেন। সন্ধ্যার পর খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নিয়ে যান। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় মেয়র ছানোয়ার হোসেন নিজেই বাদী হয়ে গতকাল রাতে আবাহনীকে একমাত্র আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সদর থানায় একটি মামলা করেছেন।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগ নেতার মুক্তি এবং মেয়রের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ, মেয়রের কুশপুত্তলিকা দাহ এবং জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
এ সময় আবাহনীর মা বলেন, ‘আবাহনী উকালতি পাস করেছে। সে ছোটকাল থেকে নীতি আদর্শের সঙ্গে আপস করেনি। নিষ্ঠার সঙ্গে জামালপুর পৌর ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছে। মেয়র ছানুর জমি দখলের প্রতিবাদ করায় তাকে উঠিয়ে নিয়ে নির্যাতন করে হাত পা ভেঙে দিয়েছে। তার জীবন এখন শঙ্কায়।’
তিনি বলেন, মধ্যযুগীয় কায়দায় আবাহনীকে নির্যাতন করে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করিয়েছে। আমরা আবাহনীর মুক্তি চাই, মেয়র ছানুর শাস্তি চাই।
আবাহনীর বড় বোন বলেন, আমার ভাইকে উঠিয়ে নিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছে, আমাদের পরিবারের সব সদস্যকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে।
এ বিষয়ে মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানু বলেন, আমার পৈতৃক জমিতে লাইভ করার পর আমার গ্রামের লোকজন তাকে মারধর করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে।
এ বিষয়ে জামালপুর সদর থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, মেয়র ছানুর বিরুদ্ধে দুপুরে ব্যক্তিগত ফেসবুক থেকে লাইভ করেন আবাহনী এবং সে লাইভে মেয়রকে ভূমিদস্যু হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি। বিষয়টি জানতে পেরে মেয়র ও তার পক্ষের লোকজন উত্তেজিত হয়ে সন্ধ্যার পর ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করে এবং মারধর করে তাকে থানায় সোপর্দ করে। এরপর মেয়র বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন এবং সে মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।