আজ ২৭ জানুয়ারি ‘শহীদ হারুন দিবস’। ১৯৬৯ সালের এই দিনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ময়মনসিংহের গৌরীপুর মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আজিজুল হক হারুন। এরপর ৫৪ বছর কেটে গেলেও হারুনের আত্মত্যাগ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি।
স্বাধীনতার পর গৌরীপুরে শহীদ হারুন পার্ক গড়ে তোলা হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে পার্কটির বেহাল দশা। স্থানীয়রা পার্কটি আধুনিকায়ন, হারুনের স্মৃতি সংরক্ষণ ও আত্মত্যাগের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন।
হারুনের বাড়ি নান্দাইলের চণ্ডীপাশা ইউনিয়নে। তিনি গৌরীপুর মহাবিদ্যালয়ের উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৯৬৯ সালের ২৭ জানুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে পাকিস্তানি শাসক আইয়ুব খানের পতনসহ ১১ দফা দাবিতে গৌরীপুর মহাবিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংসদের ভিপি ফজলুল হকের নেতৃত্বে পৌর শহরে মিছিল বের করে। ওই মিছিলের অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন হারুন। মিছিলটি শহরের ধানমহাল এলাকায় আসতেই পুলিশ গুলি বর্ষণ করলে হারুন ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীনের পর পৌর শহরের ধানমহাল এলাকায় খাস জমিতে শহীদ হারুন পার্ক গড়ে তোলা হয়। প্রতি বছর ২৭ জানুয়ারি ‘শহীদ হারুন দিবস’ পালিত শুরু হয়। ২০০৫ সালে পৌরসভার অর্থায়নে পার্কের সীমানা প্রাচীর ও ২০১২ সালে পার্কে হারুন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়াও পার্কের ভেতর রয়েছে শহীদ মিনার ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স। তবে হারুনের নামে গড়ে ওঠা পার্কের জমি এখনো সরকারিভাবে বরাদ্দ না পাওয়ায় ভবিষ্যতে এই পার্কটি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মানুষ এই স্মম্ভের গা ঘেঁষে যত্রতত্র মল-মূত্র ত্যাগ করছে। সামনের গড়ে ওঠা চায়ের দোকানের ময়লা পানি ও আবর্জনাগুলো প্রতিদিন এখানে ফেলা হচ্ছে। ফলে এই চত্বরটি বর্তমানে দুর্গন্ধযুক্ত স্থানে পরিণত হয়েছে। পার্কের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকান-পাট। পার্কে নেই কোনো বিনোদনের সরঞ্জাম। পার্কের প্রবেশ পথে গেট না থাকায় ভেতরে গরু-ছাগল চড়ানো হয়।
শহীদ হারুন স্মৃতি সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শহীদ হারুনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য স্বরাষ্ট্র ও মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। পাশাপাশি জমি বরাদ্দ দিয়ে পরিকল্পিত সংস্কার করে হারুন পার্ক রক্ষা করা জরুরি বলে মনে করছি।
ইউএনও ফৌজিয়া নাজনীন বলেন, শহীদ হারুন পার্ক সংস্কারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। জমি বরাদ্দ পেতে বিধি মোতাবেক কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন আবেদন করলে আমরা সেটা ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির আবেদনের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।