
চাঁদপুর সদরে একটি নৃত্য প্রতিযোগিতায় বিচারকের আসনে বসে মেয়ের ভুল নাচের পরেও মেয়েকে প্রথম স্থান ঘোষণা করায় ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা অন্যান্য প্রতিযোগীর অভিভাবকরা। এতে তারা ওই বিভাগের নৃত্য প্রতিযোগিতা নিরপেক্ষ বিচারক দিয়ে পুনরায় অনুষ্ঠান পরিচালনা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে গত ১৩ মে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে ‘খ’বিভাগে সদর উপজেলা পর্যায়ে গণি উচ্চ বিদ্যালয়ে নৃত্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নৃত্য বিষয়ে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির নৃত্য প্রশিক্ষক সোমা দত্ত।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সোমা দত্ত ওই প্রতিযোগিতায় নিজের মেয়েকে ভুল নাচের পরও দুটি বিভাগে প্রথম স্থান ঘোষণা করে জেলা পর্যায়ে নাচের সুযোগ দিয়েছেন। অথচ সেখানে রাত্রী রানী কর্মকার নামে জাতীয় পর্যায়ে পুরুস্কারপ্রাপ্ত নৃত্য প্রতিযোগীরা অংশ নিলেও সোমা দত্ত স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তাদের বাদ দিয়েছেন। এমনকি ওই দিন সোমা দত্ত নিজের সঙ্গে রূপা নামে আরও এক নারীকে বিচারকের আসনে বিচারকাজ পরিচালনা করান। রূপা ওই নারী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাই নন এমনকি তিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্তও কোনো নাচের শিক্ষিকা নন।
এ বিষয়ে অভিযোগ দেয়া প্রতিযোগী রাত্রী কর্মকারের মা মেরি কর্মকার কালবেলাকে বলেন, আমার মেয়ে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ নৃত্য শিল্পী হয়েছে। অথচ এখানে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির কারণে আমার মেয়ের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। বিষয়টি সব প্রতিযোগীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রীয়া সৃষ্টি হওয়ায় অনেক প্রতিযোগী ওইদিন ওই প্রতিযোগিতায় অংশও নেয়নি।
তিনি কালবেলাকে বলেন, ওই বিচারকের (সোমা দত্ত) নিজের মেয়েকে দুটি বিভাগে প্রথম দেখিয়ে জেলা পর্যায়ে প্রথম ঘোষণা করা হয় যা সম্পূর্ণ অন্যায়। কারণ ওই দিন তার মেয়ের ড্রেস কোড ভুল ছিল। তাছাড়া সে ঘুঙুরের ওপর খাড়ু পরে থাকায় নাচের একপর্যায়ে তার এক পায়ের ঘুঙুর সবার সামনে খুলে গেছে যা সম্পূর্ণ ভুল। এ ছাড়াও তার মেয়ের শাড়ি পরার পরও শরীরের অংশ বিশেষ প্রকাশ্যে দেখা গেছে। যা নৃত্যের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভুল। যেহেতু জেলা পর্যায়ে নৃত্য প্রতিযোগিতা হওয়ার এখনো সময় রয়েছে তাই আমি ওই বিভাগের নৃত্য প্রতিযোগিতা নিরপেক্ষ বিচারক দিয়ে আবারও নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে সোমা দত্ত কালবেলাকে বলেন, আগের থেকেই এই ধরনের প্রতিযোগিতায় আমাকে বিচারকের দায়িত্ব প্রশাসন থেকে দেওয়া হয়। তাই আমি বিচারকাজ পরিচালনা করেছি। তবে আমার সঙ্গে আরও বিচারকও ছিলেন। একটি ইভেন্টে আমার মেয়ে বাদে অন্য প্রতিযোগীরা ছিল না বলে ওর নামটা এমনিতেই প্রথম স্থানে চলে আসে। আর অন্যটিতে অন্যান্য বিচারকদের নম্বরের পর আমি নাম্বারিং করেছি। এ সময় আমার মেয়ের নৃত্যে কোনো ভুল ছিল না। তাই এই অভিযোগ মিথ্যা।
রূপা নামের আরেক বিচারক কালবেলাকে বলেন, আমি নিজে থেকে বিচারক হতে চাইনি। ওখান থেকে সোমা দিদি অনুরোধ করায় আমি বিচারক আসনে বসেছি। আমি নৃত্যের সঙ্গে পরিচিত না। তবে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিযোগিতায় প্রাথমিকের কোনো শিক্ষক বিচারক হিসেবে থাকতে পারে কিনা আমার এই নিয়মটা জানা নেই। বিষয়টা বুঝতে পেরে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমাদের তিনজন বিচারক থাকার কথা থাকলেও ওখানে উপস্থিত ছিলাম মাত্র দুজন। পরে অপর বিচারক অনুষ্ঠানে এসেছিল কিনা বিষয়টা আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে স্বপ্তরূপা নৃত্য শিক্ষালয়ের অধ্যক্ষ অনিমা সেন চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, নাচের ক্ষেত্রে ঘুঙুরই প্রধান। কেননা গানের যে তালে প্রতিযোগী নাচবে ঘুঙুর সে তালে কথা বলবে। অতএব ঘুঙুর যদি খুলে যায় তাহলে ওই প্রতিযোগী অযোগ্য হিসেবে গণ্য হবে। আর শাড়ি পড়ার পরেও যদি শরীরের অংশ বিশেষ দেখা যায় আর সেটা যদি বাছাই পর্ব হয় তাহলেও তার নম্বর কমে যাবে। এ ক্ষেত্রে অপর যে প্রতিযোগীরা সুযোগ পাবে।