নীলফামারীর সৈয়দপুরে চার ঘণ্টা ব্যবধানে দুই দফায় স্বর্ণের বার উদ্ধার নিয়ে লুকোচুরির অভিযোগ উঠেছে মাদক অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে স্বর্ণ জব্দের ১৬ ঘণ্টা পর গতকাল রোববার সৈয়দপুর থানায় মামলা দায়ের করায় প্রশ্ন উঠেছে উদ্ধার অভিযান নিয়েও।
জানা যায়, গত শনিবার সকালে নীলফামারী জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃক রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের কামারপুকুর বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। এ সময় অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সৈয়দপুর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) উপস্থিতির বিষয়েও মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, নীলফামারী জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের কামারপুকুর বাজার এলাকায় পঞ্চগড়গামী নাবিল পরিবহনের একটি নৈশকোচে দুই যাত্রীর দেহ তল্লাশি করে ১৫টি স্বর্ণের বার উদ্ধার ও তাদের আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিরা হলেন মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার গোবিন্দল গ্রামের নুরু উল্লাহের ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহ (২৬) এবং একই এলাকার সমন আলীর ছেলে আবদুর রহিম (২৫)।
পরে দুপুর সোয়া ১টার দিকে প্রথম দফায় সৈয়দপুর গোল্ড হলমার্ক সেন্টারে পরীক্ষা শেষে উদ্ধার হওয়া ১৫টি স্বর্ণের বার আসল স্বর্ণ হিসেবে নিশ্চিত হয় উদ্ধারকারী দল, যার বাজারমূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। এরপর উদ্ধারকারী দলটি বিকেল ৫টার পর আরও ৫টি স্বর্ণের বার আটক যাত্রীদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে বলে সংবাদকর্মীদের কাছে প্রকাশ করায় সন্দেহের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এ সময় ৩০ থেকে ৪০টি স্বর্ণের বার উদ্ধারের খবর গোটা শহরে ছড়িয়ে পড়ে।
এ ছাড়া দায়ের করা মামলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সৈয়দপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলামের উপস্থিতিতে অভিযান পরিচালনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু অভিযানকালে ওই কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না। তবে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত স্বর্ণের বার থানায় এনে জব্দ তালিকা তৈরির সময় ওই কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে মামলার বাদী ও নীলফামারী জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম জানান, বিকেলে দ্বিতীয় দফায় তল্লাশির সময় মোহাম্মদ উল্লাহ নামের আসামির পরিহিত আন্ডারওয়্যার থেকে ৫টি স্বর্ণের বারসহ মোট ২০টি উদ্ধার করা হয়। কিন্তু মামলায় তা উল্লেখ না করে একসঙ্গে উদ্ধারের বিষয়টি প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান। তবে ৩০ থেকে ৪০টি স্বর্ণের বার উদ্ধারের বিষয়টি গুজব হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, রাত ১২টার পর রোববার মামলা করার পর আসামিদের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। আসামিদের আদালতের মাধ্যমে রোববার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। থানার উপপরিদর্শক হামিদুল ইসলামকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সৈয়দপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম অভিযান পরিচালনা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না; জব্দ তালিকা ও প্রথম দফায় স্বর্ণের বার পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় তার উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।