‘ভাই বাস করতেন বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলায়। মৃত সেই ভাইয়ের একটা ছেলে আছে। ওদের দেখার জন্য আমিও পাগল হয়ে গেছি। ভাইয়ের বাড়িতে কীভাবে এসেছি, বলতে পারব না। এখন দেশে ফিরে যাব, কিন্তু ওরা যেতে দিচ্ছে না।’ মুন্সীপুর সীমান্তে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে এভাবেই কথাগুলো বলছিল বৃদ্ধ জমিলা বেওয়া।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, তিন মাস আগে সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলার কাশিয়ারীপাড়ায় বসবাসকারী ভাই মৃত রহিম বকশের বাড়িতে এসেছিলেন জমিলা বেওয়া (৭৮)। এরপর ২২ জানুয়ারি বিকেলে ভারতে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার মুন্সীপুর সীমান্তের ৯৩ নম্বর মেইন পিলারের কাছে ঘুরঘুর করতে থাকেন।
বৃদ্ধ জমিলা বেওয়া সীমান্ত পেরিয়ে পুনরায় ভারতে প্রবেশ করতে চাইলে ৮২ বিএসএফের মহাখোলা ক্যাম্পের কর্তব্যরত সদস্যরা তাকে ভারতে প্রবেশে বাধা প্রদান করেন। পরে বিজিবির টহল দল বৃদ্ধা ভারতীয় নাগরিককে ফেরত নেওয়ার জন্য মহাখোলা বিএসএফ সদস্যদের অনুরোধ করলে তারা পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিক জমিলাকে গ্রহণ করা হবে জানায়। বৃদ্ধা ও বার্ধক্যজনিত হওয়ায় মানবিক দিক বিবেচনা করে বিজিবি মুন্সীপুর কোম্পানি কমান্ডার বিএসএফ কর্তৃক মহাখোলা কোম্পানি কমান্ডারকে পতাকা বৈঠকের জন্য পত্র প্রেরণ করে।
পরে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক পর্যায়ে মোবাইল কথোপকথনের মাধ্যমে বিজিবির পক্ষ থেকে তাকে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান করা হয়। এরপর এ ব্যাপারে ২৪ জানুয়ারি বিজিবির যশোর রিজিয়নের নোডাল অফিসার লে. কর্নেল মোহাম্মদ আনোয়ারুল মাযহার কর্তৃক বিএসএফের সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার নোডাল অফিসার ডিআইজি অমিরেশ কুমার আরিয়াকে পুনরায় অনুরোধ করা হয়।
অবশেষে ২৫ জানুয়ারি ৮২ বিএসএফ কমান্ড্যান্ট অধিনায়ক ভারতীয় নাগরিককে গ্রহণের বিষয়ে ইতিবাচক সম্মতি জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন বিকেল ৫টায় বিজিবির মুন্সীপুর বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্ত পিলার ৯৩/৩-আর এর কাছে বিজিবি-বিএসএফ কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিক জমিলা বেওয়াকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করেছে বিজিবি।
জমিলা বেওয়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার ধুবুলিয়া থানার পাথরাদহ গ্রামের মৃত ফজলুরের স্ত্রী। তার এনআইডি নম্বর-ঊই/১১/০৭৬/১১৪৫২৬।
চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়নের (৬ বিজিবি) পরিচালক লে. কর্নেল শাহ মো. ইশতিয়াক এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি সীমান্তে এ ধরনের মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে বিজিবি।’ এদিকে বিজিবি-বিএসএফের এই মানবিক উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ।