হাসপাতাল থেকে বাচ্চা চুরির অভিযোগ, ওটিতে মিলল মদ

হাসপাতাল থেকে বাচ্চা চুরির অভিযোগ, ওটিতে মিলল মদ

রাজশাহী নগরীর তালাইমারী এলাকার বাসিন্দা সৈয়দা তামান্না আখতার। গত বৃহস্পতিবার প্রসব বেদনা উঠলে রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার রয়েল হাসপাতালে আসেন। সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শে দুপুর ২টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি হন।

বিকেল ৩টার দিকে তাকে অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নেওয়া হয়। ওটিতে এক ঘণ্টা পার না হতেই রোগীকে বের করা হয়। তবে এ সময় ওই নারীর সঙ্গে কোনো বাচ্চা ছিল না। রোগীর স্বজনরা জানতে চাইলে চিকিৎসকরা জানান, তার পেটে কোনো বাচ্চা নেই। রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, তামান্না আখতারের গর্ভে দুটি সন্তান ছিল। ওটিতে নেওয়ার পর রোগীকে অ্যানেস্থেসিয়ার (অজ্ঞান করার) ইনজেকশনও দেওয়া হয়। এরপর তিনি বাচ্চা প্রসব করেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার সেই বাচ্চা চুরি করেছে।

পুলিশ বলছে, এ বিষয়ে তাদের কাছে মৌখিক অভিযোগ এসেছে। সত্য তথ্য উদ্ঘাটনে তারা কাজ করছেন। তবে ঘটনার পর থেকেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ম্যানেজার পলাতক। এদিকে হাসপাতাল তল্লাশি করার সময় অপারেশন থিয়েটারে একটি বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করেছে পুলিশ।

সৈয়দ তামান্না আখতার বলেন, ‘আমি ৯ মাস ১২ দিনের অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম। এর আগেও আমি ডাক্তার দেখিয়েছি। আমার পেটে দুইটা বাচ্চা ছিল। আলট্রাসনোগ্রামে দেখা গেছে, একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে ভর্তির পর আমাকে ওটিতে নেওয়া হয়। এর আগে আমার সব কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়। এরপর আমাকে একটি ইনজেকশন দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘ওটিতে নেওয়ার পর তারা আমার সঙ্গে বাজে আচরণ করতে থাকেন। এর কিছুক্ষণ পর একজন ডাক্তারকে বলেন, এদিকে দেখেন। তখন আমি বুঝতে পারলাম আমার পুরো শরীর ঝাঁকি দিচ্ছে। মনে হলো বাচ্চা টেনে বের করে নেওয়া হচ্ছে। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরল তখন আমি জানতে পারলাম আমার পেটে নাকি কোনো বাচ্চা ছিল না।’

তামান্না আখতার বলেন, ‘যদি মৃত বাচ্চাও হয় সেটা আমাকে দেওয়া হোক। আমার বেবি যদি না-ই থাকে তাহলে ৯ মাস ১২ দিন আমি কী ক্যারি করলাম?’

তামান্নার শাশুড়ি তাহেরা বিশ্বাস বলেন, ‘আমার বউমাকে ওটিতে নিয়ে যাওয়ার পর তারা বাচ্চার জন্য নতুন কাপড়ও নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই তারা সেটি ফিরিয়ে দিয়ে যায়। আমাদের বলে রোগীর প্রেসার উঠেছে, ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। এখন ঘুমাচ্ছে। প্রেসার কমলে অপারেশন করা হবে। তার কিছুক্ষণ পরই আমার মেয়ে ওটিতে গিয়ে দেখে বউমার পেট নেমে গেছে। আগের মতো উঁচু নেই।’ তিনি বলেন, ‘এখানে নিয়ে আসার পর আমি দেখি রক্ত আসছে। কিন্তু কোনো অপারেশন করা হয়নি। এখন আমার বউমার পেট তাহলে কমল কিসে? আর বাচ্চাটাই বা গেল কই?’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রয়েল হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিয়ার চিকিৎসক আলী চৌধুরী রিমন বলেন, রোগীর অবস্থা গুরুতর ছিল। তার ভাইয়ের কাছে শুনেছেন তার পেটে দুইটা বাচ্চা ছিল। তারও মনে হয়েছে পেটে বাচ্চা ছিল। তাই তিনি অজ্ঞান করার ইনজেকশন দেন।

তবে গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিশাত আনাম বর্ণা বলেন, একজন নারী প্রেগন্যান্সির সব সিম্পটম নিয়ে এখানে এসেছিলেন। তাকে পরীক্ষা করার আগেই তার প্রসব বেদনা ওঠে। তিনি দাবি করেন, তারা (রোগীর স্বজনরা) কোনো কাগজপত্র জমা দিতে পারেননি। তার কাছে কোনো পরামর্শও নেওয়া হয়নি।

রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজল নন্দী বলেন, এ বিষয়ে মৌখিক একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমরা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করেছি। এখন তদন্ত চলছে। তদন্তে সত্য বেরিয়ে আসবে। তবে মদ উদ্ধারের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।

ঘটনার পর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও হাসপাতালটির ম্যানেজার পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com