
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ভালনারেবল ওমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কার্মসূচির চাল বিতরণে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেইসঙ্গে পরিষদের ভেতরেই কেনাবেচা হচ্ছে সুবিধাভোগীদের জন্য বরাদ্দ চাল।
ঘটনাটি ঘটেছে রমনা মডেল ইউনিয়ন পরিষদে। এদিকে সুবিধাভোগীরা বলছেন, চালের সঙ্গে দেওয়া বস্তার মূল্য হিসেবে নেওয়া হচ্ছে এই টাকা। ইউপি চেয়ারম্যানের দাবি, চালের বস্তার জন্য নেওয়া হয়েছে এই টাকা। অপরদিকে চাল কেনাবেচার বিষয়টি তিনি কোনোভাবেই প্রতিকার করতে পারচ্ছেন না বলেও জানিয়েছেন।
উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়ন পরিষদে আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুবিধাভোগীরা চাল নেওয়ার জন্য দিচ্ছেন মাথাপিছু ২০ থেকে ৩০ টাকা। চাল নিয়েই আবার তারা তা সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করছেন।
চাল বিতরণের সময় শ্রমিক মাইদুল ইসলামকে কিসের টাকা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান টাকা নিতে বলেছে। আপনারা চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন।’
সুবিধাভোগী রাহেনা বেগম বলেন, ‘৩০ কেজি করে চাল পেয়েছি এবং ভালো চালই দিয়েছে। কিন্তু তারা আমার থেকে ৩০ টাকা নিয়েছে চালের বস্তার জন্যে।’ অপরদিকে আরেক সুবিধাভোগী খালেদা জানান, ‘কেন টাকা নিছে জানি না। সবার থেকেই এই টাকা নিছে। আমাকে দিতে বলছে, আমিও দিছি।’
এই প্রতিবেদককে দেখে এক সুবিধাভোগী চালের ব্যবসায়ী ভেবে ১১শ’ টাকা চাল দরদাম করে। অপরদিকে পরিষদে চাল বিতরণের স্থানের ঠিক সামনেই কয়েকজন ব্যবসায়ীকে চাল কিনতে দেখা গেছে। তারা ৩০ কেজি চালের বস্তা ১০৫০-১১৫০ টাকা দিয়ে কিনে নিচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুবিধাভোগী এক নারী জানান, তিনি ৩০ কেজি চালের বস্তা ১১০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। শুধু ওই নারীই নন, এমন আরও অনেকেই এভাবে চাল উন্মুক্তভাবে দরদাম করে বিক্রি করছে। তবে চাল ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার ভালনারেবল ওমেন বেনিফিট মহিলা উন্নয়ন (ভিডব্লিউবি) আওতায় ৩ হাজার ২২৩ জন সুবিধাভোগীর মাঝে এই কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রাণীগঞ্জ ইউনিয়নে ৫৬৮টি, নয়ারহাটে ৩৬০টি, থানাহাটে ৭৬০টি, চিলমারী ইউনিয়নে ৩২৫টি, অষ্টমীরচরে ৫১৫টি এবং রমনা মডেল ইউনিয়নে ৬৯৫টি কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।
এর আগে সকালে উপজেলার থানাহাট ও রমনা মডেল ইউনিয়নে ১ হাজার ৪৫৫ জনের মাঝে চাল বিতরণের উদ্বোধন করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রুকুনুজ্জামান শাহীন। এদিকে শুরুর দিনেই এমন অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ভালনারেবল ওমেন বেনিফিট মহিলা উন্নয়ন (ভিডব্লিউবি) প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ওই ইউনিয়নের দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার ও কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি অফিসিয়াল কাজে বাইরে এসেছি, এর মধ্যেই ইউপি চেয়ারম্যান আমার সঙ্গে কথা না বলে মালামাল বিতরণ শুরু করেছেন। আমি টাকা নেওয়ার বিষয়টি শুনেছি এবং চাল বিতরণ বন্ধ রাখতে ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেছি।’
এদিকে, টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আকা বলেন, ‘বস্তার মূল্য হিসেবে এই টাকা নেওয়া হচ্ছে।’ চাল বিক্রির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি চাল যাতে কেউ বিক্রি না করে। আজ যেহেতু প্রথম দিন। তবে এরপর থেকে পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে চাল বিতরণ করা হবে, যাতে কোনো ব্যবসায়ী পরিষদের ভেতর থেকে এই ধরনের কার্যক্রম না করতে পারে।’
এ বিষয়ে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোছা. সোহেলী পারভীন বলেন, ‘বস্তার টাকা নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। আপনাদের মুখে শোনার পর আমি লোক পাঠিয়েছি। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’