
চার লাখ টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে রাজশাহীর সপুরা বিসিক শিল্প নগরীতে দুই নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত তাদের পেটানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ রাত সাড়ে ৯টার দিকে আহত দুজনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। পরে সেখানে তাদের মৃত্যু হয়।
এদিকে, এ হত্যাকাণ্ডে কারখানার ম্যানেজার, বাড়ির মালিকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। পরে আজ শুক্রবার দুপুরে নিহত একজনের স্ত্রী বাদী হয়ে ওই চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০ জনকে আসামি করে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ওই চারজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
নিহতরা হলেন- মো. রাকিবুল ইসলাম (৩৮) ও রেজাউল করিম ওরফে আতাউর (৪৫)। রাকিবুলের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৈতন্যপুর গ্রামে। আর রেজাউলের বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার সুখনিয়া গ্রামে। তারা রাজপাড়া থানার তেরোখাদিয়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
গ্রেপ্তার হয়েছেন- কারখানার মালিক মো. আব্দুল্লাহ, তার শ্বশুর মো. মাসুম রেজা, বাড়ি মালিকের চাচাতো শ্যালক মো. মঈন উদ্দিন রিয়াল এবং কারখানার ম্যানেজার মো. ইমরান।
বোয়ালিয়া থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, একটি খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানির মালিকের বাড়িতে দুই নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মহানগরীর বিসিক শিল্প এলাকার মডার্ন ফুড নামের কোম্পানির মালিকের বাড়িতে বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে রাতে পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার দুই নির্মাণ শ্রমিককে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে রেজাউলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। আরেক শ্রমিক রাকিবুলকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসার জন্য নেওয়ার কয়েক মিনিট পর তারও মৃত্যু হয়।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের বোয়ালিয়া জোনের উপকমিশনার আরেফিন জুয়েল জানান, জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে- সপুরা বিসিক মডার্ন ফুড কারখানার মালিক আব্দুল মালেকের ছেলে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর কারখানা সংলগ্ন বাড়িতে রাজমিস্ত্রির কাজ করছিলেন দুই শ্রমিক। বৃহস্পতিবার দুপুরে চার লাখ টাকা চুরির অভিযোগে তাদের খুঁটিতে বেঁধে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে বেদম পেটানো হয়। চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ে রাত সোয়া ৯টা পর্যন্ত দুই শ্রমিকের ওপর নৃশংস কায়দায় নির্যাতন চলে। তাদের হাত-পায়ের নখ পর্যন্ত তুলে ফেলা হয়।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আজ সন্ধ্যার মধ্যেই রামেক হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ তাদের স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
নিহত রাকিবুলের ছোট ভাই মমিনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘আমার বড় ভাই শ্রমিকের কাজের পাশাপাশি ইটের ব্যবসাও করত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ইট নিয়ে ওই ফ্যাক্টরির মালিকের নির্মাণাধীন বাড়িতেও দিয়েছিল। তাদের কাছে টাকা পেত। সেই টাকা চাইতে গেলে পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে চুরির অপবাদ দিয়ে পাশবিক কায়দায় হত্যা করেছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’