কুমিল্লায় দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তের অভিযোগ এনে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ‘অবরুদ্ধ’ করে বিক্ষোভ করেছে করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
গতকাল বুধবার দুপুর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দেবিদ্বার উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা প্রধান শিক্ষক ও তার জামাতার ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়াও উত্তেজিত জনতা পুলিশের তিনটি গাড়ি, একটি সিএনজি ও বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের কয়েকটি দরজা ভাঙচুর করে।
রাত পৌনে ৯টায় কুমিল্লা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ও দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে আনার পথে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া করে। এ সময় ডিবি পুলিশসহ তিন পুলিশকে আটক করে মারধর করে এবং এক পুলিশ সদস্যকে আটকে রাখে। রাত সাড়ে ৯টায় ওই পুলিশ সদস্যকে উদ্ধারে এলাকায় অভিযান চালানো হয়। রাত ১০টা পর্যন্ত এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও শটগানের গুলি ছোঁড়ে। এতে ১০-১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়।
গুলিবিদ্ধ আহতরা হলেন- সিয়াম (১৫), মিনহাজ (১৭), অলি (১৬), আকাশ (১৬) আরিফুল ইসলাম (২৬), সাব্বির (১৮) ও হৃদয় (১৭)। তাদের প্রথমে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও পুলিশ সদস্য জহিরুল ইসলাম ও সারোয়ারসহ ৭ জন পুলিশ আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। রাত ১২টা পর্যন্ত ৮-৯ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
এদিকে দুপুর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দেবিদ্বার-বিপাড়া (সার্কেল) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো.আমিরুল্লা, ওসি কমল কৃষ্ণ ধর, ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবীর, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরাসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিত হয়ে ঘটনার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, প্রধান শিক্ষক মোক্তল হোসেন তার মেয়েকে যৌন হয়রানি করেছেন। তিনি তার বিরুদ্ধে মামলা করবেন।
কয়েকজন অভিভাবক বলেন, এর আগে প্রধান শিক্ষক মোক্তল হোসেন কয়েকটি স্কুলে প্রধান শিক্ষক থাকাকালে ছাত্রীদের সঙ্গে এমন অপকর্ম করেছেন। পরে তাকে ওই স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর দেবীদ্বারে এসে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তিনি এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান।
Link a Story
ঝালকাঠিতে বাসচাপায় স্কুলছাত্রসহ নিহত ২, সড়কে বিক্ষোভ
ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোক্তল হোসেন বুধবার দুপুরে স্কুলের বিরতির ফাঁকে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ডেকে তার নিজের অফিস কক্ষে নিয়ে যান। পরে তাকে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে বলেন এবং কোনো ছেলের সঙ্গে প্রেমে না জড়ানোর উপদেশ দেন। এসব কথাবার্তার এক ফাঁকে তিনি ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন। এ সময় মেয়েটি দৌড়ে বের হলে বাইরে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী দেখে। পরে তারা পুলিশ ও সাংবাদিকদের বিষয়টি জানায়। পরে ওই ছাত্রী বাড়িতে তার অভিভাবকদের ঘটনাটি জানালে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা স্কুল মাঠে প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে জুতার মালা ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করে।
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। এতে অন্তত ১৫-২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে দুইজন পুলিশ সদস্য সদস্য রয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে স্থানীয়রা।
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক মোক্তল হোসেন বলেছেন, ‘এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানেয়াট ও ভিত্তিহীন। মিথ্যে কলঙ্ক রটিয়ে একটি রাজনৈতিক মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আমাকে স্কুল থেকে তাড়ানোর ষড়যন্ত্র করছে।’
Link a Story
নরসিংদীতে সংসদ সদস্যের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আগুন
এ বিষয়ে দেবিদ্বার-বিপাড়া (সার্কেল) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আমিরুল্লা বলেন, পুলিশের দুজন সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোক্তল হোসেনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ভুক্তভোগীর বাবা থানায় মামলা দিতে ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে অপর আরেকটি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানা পুলিশের এ্ই কর্মকর্তা।