সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা, আইন সংশোধনের দাবি জেলেদের

নিষেধাজ্ঞার কারণে এভাবেই রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে ট্রলার।
নিষেধাজ্ঞার কারণে এভাবেই রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে ট্রলার।ছবি : কালবেলা

সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার উপকূলে ফিরতে শুরু করেছে মাছ ধরার ট্রলারগুলো। এরই মধ্যে উপকূলের রাস্তার দুই পাশে নোঙর করেছে শত শত ট্রলার। নিষেধাজ্ঞা, বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে টিকে থাকতে এই আইনের সংশোধন আনতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন জেলেরা।

দেশের মৎস্য সম্পদের সুরক্ষা ও মাছের বংশবিস্তারে সাগরে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয়ে যাওয়া এই নিষেধাজ্ঞা আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকে বঙ্গোপসাগরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারে প্রতি বছর ৬৫ দিন মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা চালু হয়। পরে ২০১৯ সালে সব ধরনের নৌযানকে এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়।
শুরু থেকেই জেলেরা এই নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করলেও মৎস্য বিভাগ বলছে, নিষেধাজ্ঞার কারণে সামুদ্রিক মাছের পরিমাণ বাড়ছে। তবে জেলেদের এই সময়টাতে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে।

আজ শনিবার সকালে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মহেষখালীয়া পাড়া জেলে ঘাটসহ আশপাশের এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞার কারণে মাছ শিকার না করে ট্রলারগুলো চলে এসেছে উপকূলে। এসব ট্রলার নোঙর করে রাখা হচ্ছে। জেলেদের চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। কারণ অনেকের ওপর ঋণের বোঝা। জেলেদের দাবি, নিষেধাজ্ঞার সময় খাদ্য সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধিসহ আর্থিক সহায়তা দেওয়ার।

কী বলছেন জেলেরা

সমুদ্র থেকে শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়া জেলে ঘাটে ফেরা ট্রলারের মাঝি নুরুল আমিন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখার সময়ে প্রায় সাত দিন ছিলাম তীরে। তারপর সাগরে ছিলাম চার দিন, আবার চলে আসছি। প্রায় লাখ টাকা খরচ করে ৭০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছি। সরকার আমাদের ৮৬ কেজি চাল দেয়। কিন্তু এই বাজারে শুধু চাল দিয়ে সংসার চলে না।’

আইন সংশোধনের দাবি জানিয়ে আরেক জেলে নুর কবির বলেন, ‘সরকার অবরোধ দেয় তা আমরা মানি এবং উপকারও পাচ্ছি। তবে ৬৫ দিনের অবরোধ জেলেদের ঋণের বোঝা বাড়চ্ছে। অন্যদিকে অনেক জেলে পরিবারকে অনাহারে জীবনযাপন করতে হবে। এই সমস্যার বিষয়ে সরকার যেন নজর দেয়।’

কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা

টেকনাফ ক্ষুদ্র মৎস্য সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা সংশোধন এবং জেলেদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করা দরকার। পাশাপাশি জেলেদের যে পরিমাণ চাল দেওয়া হয় তা দিয়ে সংসার চলে না। সব আইন জেলেরা মানছেন।

টেকনাফ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার জানান, সমুদ্রসম্পদ রক্ষা ও বৃদ্ধিতে সরকার যে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়নে নৌ-পুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনীসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সার্বিকভাবে তৎপর থাকবে। জেলেদের গত কয়েক দিন ধরে পর্যাপ্ত সচেতন করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা সময়ের মধ্যে কেউ মাছ শিকারে গেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com