রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের গাইবান্ধার ধাপেরহাট থেকে নীলফামারীর সৈয়দপুর পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা রয়েছে ১৫টি। সড়ক বিভাগের উদ্যোগে এসব জায়গায় চালকদের উদ্দেশ্য করে সাইনবোর্ড সাঁটানো হলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। সর্বশেষ গত ১০ জানুয়ারি রংপুরের তারাগঞ্জে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গেল ১৪ মাসে এসব সড়কে প্রাণ ঝরেছে ৪৫ জনের। ফলে এসব স্পটকে ডেথস্পট বলছেন স্থানীয়রা।
হাইওয়ে পুলিশ, সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছে তার অন্যতম কারণ দ্রুত গতিতে যান চলাচল, চালকদের অসতর্কতা, মহাসড়কের মধ্যে অটোরিকশাসহ দ্রুত গতির তিন চাকার যান চলাচল। তবে এসব রোধে মাঝেমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে এ উদ্যোগ যথেষ্ট নয়।
হাইওয়ে পুলিশ বলছে, ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মামলা হয়েছে ৫০টির বেশি। ধাপেরহাট থেকে রংপুরের দমদমা ব্রিজ পর্যন্ত রয়েছে ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ স্পট। এর মধ্যে পীরগঞ্জের আঙরার ব্রিজ, মাদারহাট, পীরগঞ্জের লালদীঘি, মিঠাপুকরের জায়গীরহাট ও দমদমাব্রিজ অন্যতম। অন্যদিকে, দমদমা ব্রিজ থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত দশটি ঝুঁকিপূর্ণ স্পট রয়েছে। এর মধ্যে তারাগঞ্জের বেলতলি, তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে, সলেয়াশা বাজার, সামিট ফুড কোম্পানি সংলগ্ন এলাকা, হাজিরহাট আকিজ বিড়ি মোড়, সৈয়দপুরের কামারপুকুর ও সৈয়দপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বাজার এলাকা অন্যতম। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তিন চাকার যান। বিশেষ করে এসব বাহনের চালকরা হচ্ছে কিশোর ও অদক্ষ।
রংপুর ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্র জানায়, এসব এলাকায় ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। ২০২২ সালে মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি রংপুরের তারাগঞ্জের দোয়ালী পাড়া মোড়ে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জনের মৃত্যু হয়।
তারাগগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মাহবুব মোরশেদ বলেন, মহাসড়কে ছোট যানবাহন চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আইন প্রয়োগ আমরা করছি, কিন্তু মানুষকেও সচেতন হতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা হলে কেউ মামলা করতে চায় না। পুলিশকেই মামলা করতে হয়। আমরা সেটি করছি।
পশ্চিমাঞ্চল হাইওয়ে পুলিশের (রংপুর জোনের) সহকারী পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এ ছাড়া মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বেড়ে গেছে। এসব বিষয়ে সতর্ক রয়েছে পুলিশ। আমরা গত বছর প্রায় ৫০টি মামলা দিয়েছি।
মহাসড়কের চিহ্নিত দুর্ঘটনাকবলিত স্থানগুলোয় যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে স্পিডগান নিয়ে অভিযান চালানো হয় প্রায়ই।
রংপুর সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, সড়ককে আমরা দুই লেন থেকে ছয় লেন করতে যাচ্ছি। সাইন সিগন্যাল এবং বাঁকগুলোও চওড়া করা হচ্ছে। সতর্ক এবং স্পিড মেনে চললেই দুর্ঘটনা কমে আসবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন রংপুর বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ বলেন, তিন চাকার যানবাহন, ভটভটি, নসিমন করিমন বন্ধের দাবিতে বহুবার বলেছি কিন্তু কিছুই হয়নি। এসব বন্ধ হলে এমনিতেই অনেক দুর্ঘটনা কমে যাবে।