
ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কাঁঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমাদুল হক মনিরের গাড়ির ধাক্কায় এক মোটরসাইকেলচালক নিহত হয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালের দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ষাটপাকিয়া চৌমাথা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত মোটরসাইকেলচালক মো. মামুন মাঝি (৪০) নলছিটি উপজেলার ষাটপাকিয়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি একজন প্রবাসী ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, এমাদুল হক মনির সরকারি গাড়ি নিয়ে বেপরোয়া গতিতে সকাল বেলা বরিশালে উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ঝালকাঠির ষাটপাকিয়া চৌমাথা এলাকায় পৌঁছালে অপরদিক থেকে আসা মামুন মাঝির মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে মামুন অদূরে ছিটকে পড়েন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, ‘অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও গুরুতর আঘাতের কারণে মামুনের মৃত্যু হয়।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলা চেয়ারম্যানকে বহন করা গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে বরিশালের দিকে যাচ্ছিল। গাড়িটির সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়িতে মনির ও পুলিশের সদস্যসহ ৪-৫ জন ছিলেন।
এদিকে ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে এবং ভুক্তভোগীদের সঙ্গে বিষয়টি আপস মীমাংসা করার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান এমাদুল হক মনির।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা চেয়ারম্যান মনির তার সরকারি নিযুক্ত গাড়িচালক মো. শামিমকে বাদ দিয়ে তার নিজস্ব দেহরক্ষী আবুল বাশার বাবুকে ড্রাইভার হিসেবে ব্যবহার করতেন।
বিষয়টি স্বীকার করে চালক আবুল বাশার বাবু বলেন, ‘আমি উপজেলা চেয়ারম্যানের ড্রাইভার না, আমি তার দেহরক্ষী। তার ড্রাইভার অসুস্থ থাকায় আমি গাড়ি চালিয়েছি। আমাদের গাড়ির কোনো ক্ষতি হয়নি। আমরা তাকে (মামুন) আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসছি।’ সরকারি গাড়ি চালানোর নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিয়মে তো অনেক কিছুই নেই।’
এদিকে ঘটনার পর কাঁঠালিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়িচালক মো. শামিমকে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর লাইন কেটে দেন এবং বন্ধ করে রাখেন।
এ বিষয়ে জানতে কাঁঠালিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এমাদুল হক মনিরের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
নলছিটি থানার ওসি আতাউর বলেন, ‘আমি বিষটি শুনছি। এখন পর্যন্ত মরদেহ বরিশাল থেকে আনা হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে কাঁঠালিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমাদুল হক মনির তার ব্যক্তিগত চালক নিয়ে সরকারি গাড়ির অপব্যবহার করে আসছেন। সরকারি বিধি না মেনে প্রায় সময় জেলার বাইরে বিভিন্ন স্থানে গাড়ি নিয়ে ছুটে চলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে তিনি তার গাড়ি নিয়ে তার মায়ের নির্বাচনী প্রচারসহ দলীয় কাজে ব্যবহার করেছেন। সাবেক এক প্রভাশালী মন্ত্রীর আশীর্বাদ থাকায় কেউ তার ভয়ে মুখ খোলেননি। এ ছাড়াও চেয়ারম্যান এমাদুল হক মনির আলোচিত মিতু আক্তার দোলা ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি।