রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের পাশে পদ্মা নদীর তীর থেকে অবৈধভাবে বালু ও কৃষিজমির মাটি কেটে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ ফেরিঘাটসহ পাশের দুই গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। এ ছাড়া আগামী বর্ষায় ফেরিঘাটসহ গ্রাম দুটি ভাঙনের কবলে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ৭ নম্বর ফেরিঘাটের পাশে সাত্তার মেম্বারপাড়া গ্রাম এলাকায় পদ্মা নদীর তীর থেকে ভেকু (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে বালু কেটে ডাম্প ট্রাকে তুলছে একদল শ্রমিক। বালু বোঝাই হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যানগুলো সেখান থেকে দ্রুত ছেড়ে যাচ্ছে। এভাবে বালু তোলার কারণে ওই এলাকায় বড় জায়গাজুড়ে অসংখ্য গভীর গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।
এ সময় কথা হয় সেখানে উপস্থিত দৌলতদিয়া ইউনিয়নের হোসেন মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দেড় থেকে দুই মাস ধরে আমরা এখানে ভেকু দিয়ে বালু কেটে বিক্রি করছি। আমরা অবৈধ কোনো কাজ করছি না। বালু কাটার জন্য জমির প্রকৃত মালিকদের আমরা টাকা দিয়েছি।’
দৌলতদিয়া আক্কাছ আলী হাই স্কুলের অদূরে কলাবাগান নামক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পদ্মা নদীর তীরে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। জমিতে কাজ করছেন চাষিরা। কিন্তু পাশের কৃষিজমির বিশাল জায়গাজুড়ে অসংখ্য গভীর গর্ত। সেখানে পড়ে আছে একটি ভেকু।
চাষিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে কালবেলাকে জানান, প্রতিবছর এই এলাকা বর্ষার পানিতে তলিয়ে পলি জমে। তাই এখানকার মাটি খুব উর্বর। ক্ষেতে ফসল উৎপাদন খুব ভালো হয়। কিন্তু মাটিখেকোদের থাবায় এমন আবাদি জমি দিন দিন ধ্বংস হচ্ছে। ঝামেলা এড়াতে তারা দিনের আলোয় মাটি কাটা বন্ধ রাখে। রাত ৮টার পর থেকে ভোররাত পর্যন্ত এখানে ভেকু দিয়ে মাটি কাটা হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য কাশেম খান বলেন, ‘বালু ও মাটিখেকোর দল এখন অনেকটা বেপরোয়া। তারা পদ্মার তীর থেকে অবৈধভাবে বালু ও মাটি কেটে বিক্রি করছে। এতে আগামী বর্ষায় ফেরিঘাটসহ সাত্তার মেম্বারপাড়া গ্রামটি ভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ জরুরি।’
গোয়ালন্দ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুর রহমান বলেন, ‘পদ্মার তীর থেকে অবৈধভাবে বালু ও ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে আসছে। এতে কিছুদিন অবৈধ মাটিকাটা বন্ধও থাকে। পরে তারা ফের সক্রিয় হয়ে ওঠে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মো. আবু কায়সার খান বলেন, ‘গোয়ালন্দে পদ্মা নদীর তীর থেকে অবৈধভাবে বালু ও মাটি কেটে বিক্রি করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখব। সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’