
নারায়ণগঞ্জের বন্দরে প্রকাশ্যে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা একটি বাজার দখলে নিতে মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ করেছে। সন্ত্রাসীদের গুলিতে একজন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।
গুলিবিদ্ধ মঈনুল হক পারভেজ ও তার স্ত্রী আবিদা সুলতানা সুমাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ পারভেজ জমিটির মালিক। আহত অন্যরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদিকে, জমির মালিক সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হওয়ার খবরে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করলে তারা গুলি চালাতে চালাতে পিছু হটে। তবে তারা যাওয়ার সময় চারটি মোটরসাইকেল ফেলে যায়। বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী সন্ত্রাসীদের ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেলগুলো ভাঙচুর করে এবং দুটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্দর উপজেলার ফরাজিকান্দায় নাসিম ওসমান সেতুর টোলপ্লাজা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে বন্দর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে তার আগেই সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নাসিম ওসমান তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর দক্ষিণপাশে ফরাজিকান্দা বাজারের ৬৬ শতাংশ জমির দখল নিতে পিৎজা শামীম ও আমিরের নেতৃত্বে অর্ধশত সন্ত্রাসী চারটি গাড়ি এবং ২০-২৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে সেখানে যায়। ওই সময় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সঙ্গে আনা আমিন (সার্ভেয়ার) দিয়ে জমি মাপা শুরু করে।
গুলিবিদ্ধ পারভেজ ফোনে কালবেলাকে বলেন, ফরাজিকান্দায় তার বাবা কলাগাছিয়া ইউনিয়নের প্রয়াত চেয়ারম্যান রাইসুল হক ১৯৮৮ সালে ৬৬ শতাংশ জমি কিনে সেখানে কাঁচাবাজার গড়ে তোলেন। এতদিন তারাই এ বাজার ভোগদখল করে আসছেন।
দুই মাস আগে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার জনৈক রায়হান জাদা রবি ও নূর মোহাম্মদ গং জমিটি তাদের দাবি করে। তারা রেকর্ডে থাকা একটি নামের বলে জমিটি তাদের দাবি করে। আমরা আদালতে রেকর্ড সংশোধন মামলা করি। দুই মাস আগে ওদের হয়ে পিৎজা শামীম জমিটি দখলের ব্যর্থ চেষ্টা করে। ওই সময় এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাসীদের হটিয়ে দেয়।
তিনি জানান, গত মঙ্গলবার গভীর রাতে পিৎজা শামীম ও আমিরের নেতৃত্বে বেশ কিছু সন্ত্রাসী তাদের বাসায় গিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসে। তারা প্রতিবারই নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী একটি রাজনৈতিক পরিবারের এক সন্তানের নাম ভাঙিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে।
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা অর্ধশতসংখ্যক সন্ত্রাসী নিয়ে জমিটি মাপজোক করে এবং বাজারের দোকানদারদের মারধর করে। তখন পারভেজসহ এলাকাবাসী ঘটনাস্থলের অদূরে ফরাজিকান্দা মসজিদের সামনে অবস্থান করছিলেন স্থানীয় মুরব্বিদের সঙ্গে। তারা মুরব্বিদের নিয়ে জমি দখল করতে আসা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কথা বলতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ওই সময় সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর মুহুর্মুহ গুলি চালাতে শুরু করে। সন্ত্রাসীদের ছোড়া একটি গুলি তার বাম পায়ের হাঁটুতে বিদ্ধ হলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তখন বাসা থেকে তার স্ত্রী সুমা এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে ও এলোপাতাড়ি মারধর করে তার হাত-পা ভেঙে দেয়। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসীদের ধাওয়া দেয়।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে পিৎজা শামীম খ্যাত আলী হায়দার শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি অসুস্থ, ঘটনাস্থলে যাননি। এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।
জানতে চাইলে বন্দর থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ওই ঘটনায় একজন গুলিবিদ্ধসহ বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর শুনেছি। তবে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।’