
প্রায় ছয় বছর আগের কথা। রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানায় বংশবিস্তারের জন্য আনা হয়েছিল এক ঘড়িয়াল যুগল। প্রত্যাশা ছিল নারী ঘড়িয়ালটি ডিম দিলে ঘটবে বংশবিস্তার। গেল বছর ডিম দিয়েছিল কিন্তু বাচ্চা না ফোটায় সেবারের আশায় গুড়েবালি হয়। রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যানে ঘড়িয়ালের প্রজনন উপযোগী পরিবেশ থাকলেও সম্ভব হয়নি। আবারও আশা জেগেছে ঘড়িয়াল যুগলের বংশবিস্তারের। নারী ঘড়িয়ালটি আবারও ৮টি ডিম দিয়েছে।
আজ রোববার সকালে রাজশাহী সিটি মিউজিয়াম ও আর্কাইভের কিউরেটর এবং চিড়িয়াখানার সাপ্তাহিক তদারক মো. আনারুল হকের আনা ঘড়িয়ালের সেই ডিমের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, ব্রিটিশ আমলে ঘোড়দৌড় মাঠেই রাজশাহীর কেন্দ্রীয় পার্ক স্থাপনের পর তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামান ১৯৭৩ সালের ২৮ জুলাই এটি উদ্বোধন করেছিলেন। নামের পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের মাধ্যমে তা আজ শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল ও চিড়িয়াখানা।
তিনি জানান, সম্প্রতি এই ঘড়িয়ালের প্রজনন বা বংশবৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ নেয় রাজশাহী সিটি করপোরেশন। ঘড়িয়ালের জলাশয় খাঁচার দক্ষিণাংশে বালুচর তৈরি করা হয়েছে। যাতে ঘড়িয়াল সেখানে উঠে রোদ পোহানোর সুযোগ পায় ও ডিম পাড়তে পারে। গত শুক্রবার সকাল ৯টার পর তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত কিউরেটর মো. আনারুল চিড়িয়াখানার কর্মচারী শামসুল ও আলমগীরকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে খাবার দিতে গিয়ে দেখতে পান ভাঙাচোরাসহ আস্ত কয়েকটি ডিম। ঢিবির জলের ধারেই ডিমগুলো পেড়েছে ঘড়িয়াল।
প্রায় ৩৫ বছর আগে থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যানে দুটি ঘড়িয়ালের বসবাস। তবে ওই সময় দুটিই নারী হওয়ায় প্রজনন নিয়ে কোনো আশা ছিল না। এরপর বংশবিস্তারের বিষয়টি মাথায় রেখে ২০১৭ সালের আগস্টে এখানকার একটি স্ত্রী ঘড়িয়াল ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
অন্যদিকে, ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে একটি পুরুষ ঘড়িয়াল আনা হয় রাজশাহীতে। কয়েক দিন না যেতেই পুরুষ ও স্ত্রী ঘড়িয়ালের মধ্যে ভাব-ভালোবাসা তৈরি হয়। তাদের ক্রসিং (মেলামেশা) দেখে আশায় বুক বাঁধে কেন্দ্রীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী শহীদ কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. ফরহাদ উদ্দিন বলেন, ‘জুটি বাঁধার পর এই ছয় বছরের মধ্যে অন্তত দুবার ডিম দিয়েছে নারী ঘড়িয়াল। তবে বাচ্চা ফোটেনি। কিন্তু এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে, ঘড়িয়ালরা ডিম পাড়ার পর গর্ত করে ডিম ঢেকে রাখে। রাজশাহী চিড়িয়াখানায় যে পুকুরে ঘড়িয়াল থাকে সেখানে ডিম পাড়ার পর গর্ত করে রাখার মতো কোনো ব্যবস্থা ছিল না। সে কারণে পুকুরটির মাঝখানে পানির লেভেল থেকে একটু উপর পর্যন্ত বালু ফেলা হয়েছে। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ঘড়িয়ালদের প্রজনন মৌসুম।’
তিনি বলেন, তিন-চারটা করে দুবার ঘড়িয়ালের ডিম পাওয়া গেছে। এরা বালুতে উঠে বিশ্রাম নেয়। তাই ন্যাচারালি ডিম পেড়ে বালু দিয়ে ৮-১০ ইঞ্চি ঢেকে দেওয়ার কথা। কিন্তু এটি পানিতেই ডিমটা পেড়ে দিচ্ছিল। বালুতে পাড়ছিল না। এজন্য এক-চতুর্থাংশ বালুর বেড করে দেওয়া হয়েছিল। এখানে ডিম পাড়াতে পারলে বালু দিয়ে ঢেকে হোক বা ইনকিউবেটরে হোক, আমরা বাচ্চা ফোটানোর ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলাম। এবার ঘড়িয়াল বালুতে ডিম পেড়েছে। তাই নতুন প্রাণের আশা করা যাচ্ছে।