গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৩৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হলেন ৬৫ বছরের মান্নান

প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হলেন ৬৫ বছরের মান্নান

শিক্ষা গ্রহণের কোনো বয়সসীমা নেই। সেটা আবারও প্রমাণ করলেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বৃদ্ধ আব্দুল মান্নান মিয়া। সঠিকভাবে দোকানের হিসাব রাখতে সময় ও নিয়ম মেনে প্রতিদিন স্কুলে আসছেন তিনি। নাতির বয়সী শিশুদের সঙ্গে গ্রহণ করছেন শিক্ষা। ইতিমধ্যে বেশ অগ্রসর হয়েছেন আব্দুল মান্নান।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাতে প্রথম শ্রেণির বই নিয়ে ষাটোর্ধ্ব আব্দুল মান্নান মিয়া নাতির ছেলে কাওসারের সঙ্গে স্কুলে আসছেন। এ বছরে উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন তিনি। অন্য শিশু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে ক্লাস করছেন। নানার বয়সে বন্ধু পেয়ে খুশি কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। আব্দুল মান্নানের বাড়ি ওই ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত তছিম উদ্দিন।

আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা ৬ ভাই, এক বোন। আমি তৃতীয়। ছোটবেলায় লেখাপড়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু অভাবের কারণে করতে পারিনি। স্কুলে তখন তো সরকারি কোনো বই দিত না, খেয়ে না খেয়ে বড় হয়েছি। তারপর অন্যের জমিতে শ্রম দিতে শুরু করি। কখনো শ্রম বিক্রি আবার কখনো রিকশা, ভ্যান চালাতাম। বয়স বাড়ল, শরীরের শক্তি কমে এলো, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে জীবিকার তাগিদে কাশিয়াবাড়ী বাজারে একটি দোকান দিয়েছি। সেখানেই পানের খিলি বিক্রি করি, পাশাপাশি স্কুলের বই পড়ি।

স্কুলে ভর্তির বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, দোকান দেওয়ার পর থেকে অনেক বাকি বিক্রি করতে হয়েছে। বয়স হয়েছে, দোকানের হিসাব মুখে মুখে রাখা সম্ভব হয় না, তাই লেখাপড়া করার জন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছি।

দাম্পত্য জীবনে দুই মেয়ে ও এক ছেলের বাবা তিনি। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে মমিরুল ইসলাম পলাশবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পরীক্ষা দেবে। বড় মেয়ের ছেলে মাহফুজার রহমানের বিয়ে হয়েছে। তার ছেলের নাম কাওসার। তার সঙ্গেই স্কুলে যান তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা জাকারিয়া বলেন, বয়স কোনো ব্যাপার না। ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব হয়। তার প্রমাণ মান্নান চাচা। তিনি বৃদ্ধ বয়সে স্কুলে শিখতে আসছেন। প্রতিদিন তিনি স্কুলে যান। স্কুল ছুটি হলে দোকানে বসেন।

কাশিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান মণ্ডল বলেন, স্কুলে ভর্তির একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে। আব্দুল মান্নান স্কুলে ভর্তির জন্য বললে আমি স্যারদের সঙ্গে কথা বলে তাকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি দেখিয়ে বই দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি অনেক কিছুই শিখেছেন। স্কুলের নিয়মনীতি মেনেই তিনি স্কুলে আসছেন।

উম্মে কুলছুম স্মৃতি গাইবান্ধা-০৩ (সাদুল্যাপুর, পলাশবাড়ী) সংসদ সদস্য মহোদয় বলেন, শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের কোনো বয়স লাগে না এটা আবারও প্রমাণ করলেন ৬৫ বছরের বৃদ্ধ আব্দুল মান্নান। তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাকে সহযোগিতার জন্য নির্দেশসহ অনুরোধ করছি।

পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম মোখছেদ চৌধুরী বলেন, এই বয়সে লেখাপড়া করার খবর শুনে আমিসহ এলাকার সবাই ভীষণ খুশি। তিনি এ বয়সে লেখাপড়া করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা সমাজের কাছে সমাদৃত হয়ে থাকবে। তার এই উদ্যোগে শিক্ষার্থীরা উৎসাহ পাবে। ওই প্রধান শিক্ষককে তার বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তীব্র গরমে বিশ্বজুড়ে বছরে ১৮৯৭০ শ্রমিকের মৃত্যু

আপিল বিভাগে তিন বিচারপতি নিয়োগ

যুদ্ধের মধ্যেই মন্ত্রীকে আটক করলেন পুতিন

সকালে ইসতিসকার নামাজ আদায়, রাতে নামল স্বস্তির বৃষ্টি

তাপমাত্রা আরও বাড়ার শঙ্কা

অফিসার নিয়োগ দেবে কাজী ফার্ম, আবেদন করুন দ্রুত

হিট স্ট্রোকে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের মৃত্যু

অন্তঃসত্ত্বা নারীর চিকিৎসা করলেন না ডাক্তার, সমালোচনার ঝড়

টাইগারদের সঙ্গে সিরিজের জন্য জিম্বাবুয়ে দল ঘোষণা

থাইল্যান্ড পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

১০

চাকরি দিচ্ছে কাজী ফার্মস, নেই বয়সসীমা

১১

কালবেলায় প্রতিবেদন প্রকাশ / ভূমিদস্যু কামরুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ১০ আইনজীবীর আবেদন 

১২

আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় ভারত

১৩

ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যে / হঠাৎ ইরান সফরে উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধি দল

১৪

ল্যাবএইড হাসপাতালে চাকরির সুযোগ, ৪৫ বছরেও আবেদন

১৫

ইয়াবাসহ ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই গ্রেপ্তার

১৬

৪ বছরের ছেলেকে ৪১ বার ছুরিকাঘাত করেন মা

১৭

দুর্নীতি মামলায় এসকে সিনহার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৬ জুন

১৮

হারে মোস্তাফিজের দায় দেখছেন না চেন্নাই অধিনায়ক

১৯

দ্রুত গলছে হিমবাহ, হ্রদের আয়তন বাড়ছে হিমালয়ে

২০
*/ ?>
X