পটুয়াখালীর রূপালী ব্যাংকের বাউফলে শাখা ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের খবর প্রকাশের ঘটনায় উপজেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গত ২২ জানুয়ারি একটি স্থানীয় পত্রিকা ও অনলাইনে এ সংক্রান্ত একটি নিউজ প্রকাশিত হয়। এতে বিপাকে পড়েন শাখা ব্যবস্থাপকসহ ব্যাংক কর্মকর্তারা। তবে কালবেলার অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে ভিন্নচিত্র।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, স্কুলশিক্ষক মার্জিয়া ইসলাম ২১ সালের ২৭ অক্টোবর রূপালী ব্যাংক কালিশুরী বন্দর শাখা থেকে তার বেতনের বিপরীতে (৭ বছর মেয়াদি) ১০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। ওই ঋণের টাকা মাসিক কিস্তিতে ১৬ হাজার ৫শ’ টাকা করে প্রতি মাসে পরিশোধ করে আসছেন। ইতিমধ্যে মার্জিয়া ১১টি কিস্তিতে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধও করেন। সম্প্রতি ওই গৃহীতা ব্যাংকে এসে ১০ লাখ টাকা ঋণ নেয়ার কথা অস্বীকার করেন। তার দাবি, তিনি ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। শাখা ব্যবস্থাপক তার নামে ১০ লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন করে ওই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
মোসা. মার্জিয়া ইসলাম ধলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। সাইদুল ইসলাম নামের রূপালী ব্যাংকের (একই শাখার) নিরাপত্তা প্রহরীর (ফেয়ারগার্ড) সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে মার্জিয়ার পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় ওই শিক্ষিকা তার মাধ্যমে ব্যাংকের লেনদেন পরিচালনা করে আসছেন। ২১ সালে মার্জিয়া সাইদুলকে তার পাকা ভবন নির্মাণের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে সে টাকা ধার হিসেবে তাকে দেন। সম্প্রতি সময়ে ওই টাকা শোধ দিতে না পেরে গা ঢাকা দেন সাইদুল। কোনোভাবে সাইদুলকে না পেয়ে মার্জিয়া কৌশলে ব্যাংকের ওপর দায় চাপাতে ঋণের টাকা অস্বীকার করেন। তবে সাইদুল ও মার্জিয়ার টাকা লেনদেনের একটি অঙ্গীকারনামা পাওয়া গেছে। ওই অঙ্গীকারে দেখা যায়, সাইদুলের বাবা জাকিরুল ইসলাম ৯ লাখ টাকা গ্রহণের কথা স্বীকার করে ২২ সালের ২০ নভেম্বর কিস্তির (১৫ হাজার টাকা প্রতি মাসে) মাধ্যমে পরিশোধ করবেন বলে লিখিত দেন মার্জিয়াকে।
সাইদুল ইসলাম রূপালী ব্যাংক কালিশুরী বন্দর শাখায় সেইফ অ্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস লি. নামের একটি সিকিউরিটি কোম্পানির মাধ্যমে ২০১৫ সাল থেকে নিরাপত্তা প্রহরীর (ফেয়ারগার্ড) দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ২২ সালের ২ নভেম্বর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। একই সালের ৫ নভেম্বর এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংক কালিশুরী শাখা থেকে উল্লিখিত কোম্পানিকে অবহিত করা হয়।
এ বিষয়ে মার্জিয়া বলেন, আমি ব্যাংক থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। কিন্তু ব্যাংক কর্মকর্তারা আমার নামে ঋণ নিয়ে সেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
অভিযুক্ত সাইদুল পলাতক থাকায় তার বাবা মো. জাকিরুল ইসলাম টাকা গ্রহণের কথা স্বীকার করে কালবেলাকে বলেন, মার্জিয়ার কাছ থেকে আমার ছেলে সাইদুল টাকা নিয়েছে। আমি সে টাকা কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধের জন্য মার্জিয়াকে একটি অঙ্গীকারনামা লিখিতভাবে দিয়েছি।
এ ব্যাপারে রূপালী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মো. তৈয়বুর রহমান বলেন, সহকারী শিক্ষিকা মার্জিয়া ইসলামকে ব্যাংকের বিধিবিধান মেনে ১০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সত্য নয়। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের আবেদনের ভিত্তিতে সাইদুলকে ইতিমধ্যে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।