আরাভ খান ওরফে আপন ওরফে রবিউল ইসলাম এখন এ দেশের সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত একটি নাম। অথচ ১০ দিন আগেও এ নামটি ছিল সবার অচেনা। হোটেল কর্মচারী থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া এবং ঢাকার সাধারণ জীবন থেকে দুবাইয়ে বর্ণাঢ্য জীবনে তার পাড়ি দেওয়ার কাহিনি যেন আলাদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপের গল্পকেও হার মানায়।
গোয়েন্দা সংস্থা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং গণমাধ্যম কিছুতেই মেলাতে পারছে না অল্প সময়ে আরাভের এ উত্থান কীভাবে সম্ভব। আরাভ এই অর্থ তার নিজের পরিশ্রমের বলে দাবি করলেও ভিন্নমত আছে, আর সেটা হলো এই অর্থের জোগানদাতা অন্যজন। আরাভ জোগানদাতার তত্ত্বাবধায়ক মাত্র। তাহলে কে আরাভের পৃষ্ঠপোষক বা জোগানদাতা সেটা নিয়েও রয়েছে নানা জল্পনা।
আরাভ খান বৈবাহিক সূত্রে মেহেরপুরের জামাই। প্রায় দশ বছর আগে আরাভ খান মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার গাঁড়াডোব গ্রামের দিনমজুর আবুল কালামের মেয়ে সুরাইয়া আক্তার কেয়াকে বিয়ে করে মেহেরপুরের জামাই বনে যান। দিনমজুর কন্যা কেয়া লেখাপড়ায় ভালো ছিল। বাবার সল্প উপার্জনের সংসারে অর্থের টানাপড়নের মধ্যে ডাক্তারি পড়তে ঢাকায় পাড়ি দেয় কেয়া। তখন আরাভ ঢাকাতে উদীয়মান ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। আরাভের চাকচিক্যের প্রলোভনে পড়ে পটে যায় গরির ঘরের মেয়ে কেয়া। সেই সুবাদে আরাভ মেহেরপুরে আসা যাওয়া শুরু করে। অতঃপর বিয়ে হয়।
২০১৪ সালে কেয়া গ্রামে বেড়াতে আসেন। এর একদিন পর আপন ওরফে আরাভ খান তার এক বন্ধুকে নিয়ে কেয়াদের বাড়িতে যান। পরদিন কেয়ার মামার একটি ডিসকভার ১৫০ সিসি মোটরসাইকেল ও কেয়াকে নিয়ে পালিয়ে যান আরাভ খান। পালিয়ে বিয়ে করে তারা ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। কেয়ার মামা কামরুজ্জামান খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেয়ার বাবা আবুল কালাম বলেন, শুনেছিলাম গোপালগঞ্জের বড়লোকের ছেলে আরাভ। ঢাকায় অনেক বড় ব্যবসা আছে। তাই মেয়ে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছে। বিয়ের পর কেয়ার মা ঢাকায় গিয়ে মেয়ে ও জামাইয়ের সঙ্গে থাকা শুরু করেন। এদিকে আবুল কালাম জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধের মামলায় কারাগারে যান। দীর্ঘ কারাবাস শেষে মুক্তি পেলে জানতে পারে আরাভ বিয়ের কিছুদিন পর বিদেশে পাড়ি দিয়েছে।
অনুসন্ধানকালে বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে স্বর্ণসহ বিভিন্ন চোরাইপণ্য এনে সেগুলো অনত্র পাচার করাই ছিল আরাভের কাজ। এই কাজ করতে গিয়ে ভারতের সীমান্ত অঞ্চলের অনেক চোরাচালানকারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে চোরাইপথে স্বর্ণ চোরাচালানের আদ্যোপান্ত নিজের কব্জায় বুঝে নেন। এক পুলিশ কর্মকর্তা খুন হলে আরাভ সেই খুনের মামলার আসামি হন। এ সময় তার স্ত্রী কেয়া একটি অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হয়। সেও জেল থেকে মুক্তি পেয়ে চলে যায় দুবাই। সেখানে কিছু দিন পর কেয়ার সঙ্গে আরাভের বনিবনা না হলে কেয়া মেহেরপুরের আমঝুপি গ্রামের করিম মিস্ত্রীর প্রবাসী ছেলেকে বিয়ে করে দুবাই থেকে মালয়েশিয়াতে চলে যায়।