পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে সরকারকে সহায়তা প্রদানের জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে সৌরবিদ্যুৎভিত্তিক নিরাপদ পানি সরবরাহ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পানি সংকট নিরসনে ইউএনডিপি-সমর্থিত স্ট্রেংথেনিং ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইন সিএইচটি প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।’
প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পটি তিন পার্বত্য জেলায় ১০টি উপজেলায় কর্মসূচি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও মন্ত্রী বীর বাহাদুর এ কর্মসূচিকে তিন পার্বত্য জেলার ২৬টি উপজেলায় উন্নীত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন।
পার্বত্য অঞ্চলের নারীরা ‘ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী’ উল্লেখ করে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারের উন্নয়ন কাজ আরও সম্প্রসারণ করার পরামর্শ দেন। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড় এবং মাটির ক্ষয় ও পানির ঘাটতি মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত বলে প্রতিনিধি দল অভিমত ব্যক্ত করেন। সম্প্রতি জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল পরিদর্শন করেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে মন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেন, ‘দেশের মোট বনভূমির প্রায় ৪৪ শতাংশ পার্বত্য তিন জেলায় অবস্থিত। তবে বর্তমানে বন উজাড়, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে পাহাড়ি এলাকার একটি বড় অংশে বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে।’
এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার মান উন্নয়নে ইউএনডিপি ও ইউনিসেফের প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, ‘এখন প্রয়োজন ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে আবাসিক হোস্টেল নির্মাণ, দেশে বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের জন্য পর্যাপ্ত বৃত্তির ব্যবস্থা করা এবং সর্বত্র মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা।’
মন্ত্রী পার্বত্য যুবকদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে নার্সিং, মোবাইল সার্ভিসিং, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ট্যুরিস্ট গাইড ম্যানেজমেন্ট, ড্রাইভিং ও মেরামতসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান কাজে সহযোগিতা করার জন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
এ ছাড়া দারিদ্র্যবিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নসহ এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সম্পদ সংগ্রহের মাধ্যমে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম বলেন, ‘সরকার পার্বত্য অঞ্চলের জনগণের বিভিন্ন সমস্যা অগ্রাধিকারভিত্তিতে সমাধান করছে।’
সচিব সরকারের টেকসই উন্নয়ন অর্জনে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহকে সরকারকে সহযোগিতা প্রদানের জন্য মত ব্যক্ত করেন।
প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গুয়েন লুইস। এ সময় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি সদস্যদের মধ্যে রাষ্ট্রদূত ও ইইউ প্রতিনিধি দলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি, ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেনরিক্টর-ভেনডসেন, এফএও কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিটিভ রবার্ট সিম্পসন, ইউনিসেফের ফিল্ড অফিসের প্রধান মাধুরী ব্যানার্জী এবং ইউএনডিপির সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ চাকমা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম, অতিরিক্ত সচিব সত্যেন্দ্র কুমার সরকার, যুগ্মসচিব আলেয়া আক্তার, যুগ্মসচিব হুজুর আলী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।