বৃদ্ধ বাবার ঠাঁই গণশৌচাগারে, উদ্ধার করল পুলিশ

শুক্রবার লিয়াকত আলিকে তার ছেলেদের হাতে তুলে দেন বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন।
শুক্রবার লিয়াকত আলিকে তার ছেলেদের হাতে তুলে দেন বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন।ছবি : কালবেলা

নিজের ভিটেমাটি-জমিজমা সবকিছু লিখে দিয়েছেন সন্তানদের নামে। যেন এটিই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বৃদ্ধ লিয়াকত আলির (৭০)। তারপর থেকেই থাকতেন জরাজীর্ণ একটি ভাড়া বাসায়। অসহায় বৃদ্ধ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে বৃদ্ধের বাড়িওয়ালা। এতেই চটে যান সন্তানরা। ক্ষুব্ধ হয়ে বৃদ্ধ লিয়াকত আলিকে তার ছেলেরা গণশৌচাগারে রেখে আসেন। পরে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে নগরীর তালাইমারি এলাকায়।

স্থানীয়রা জানান, বৃদ্ধা লিয়াকত আলির তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলের নাম মিঠু। তার মুদিখানার ব্যবসা রয়েছে। মেজ ছেলে সুমন ও ছোট ছেলে লিমন। তারা দুই ভাই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মিস্ত্রি (মেরামত করে)। লিয়াকতের তিন ছেলেই সচ্ছ্ল। বৃদ্ধ যে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন সেখান থেকে তার ছেলেদের বাড়ির মালিক নিয়ে যেতে বললে তারা শুক্রবার তাকে নিয়ে তালাইমারির গণশৌচাগারের রেখে যান।

তারা আরও জানান, এক সময় বৃদ্ধ লিয়াতক আলির জমি ও বাড়ি ছিল। তিনি সব কিছু তার ছেলেমেয়েদের লিখে দিয়েছেন। এখন কিছুই নেই তার। এমন অবস্থায় নিঃস্ব লিয়াকতের ঠাঁই হয় গণশৌচাগারে।

স্থানীয় বাসিন্দা নাহিদ জানান, ‘তিন ছেলেই মোটামুটি সচ্ছল। এদের একজনের নগরীর কাজলা এলাকায় দোতালা বাড়ি রয়েছে। অথচ বৃদ্ধ বাবাকে থাকতে হয়েছে ভাড়া বাড়িতে। আবার অসুস্থ হওয়ায় বৃদ্ধের ঠাঁই হয়েছিল গণশৌচাগারে! বিষয়টি খুবই কষ্টদায়ক। সন্তান হয়ে বাবাকে তারা কীভাবে এবং কোন বিবেকে এভাবে গণশৌচাগারে ফেলে রেখে চলে যায় তা বোধগম্য নয়।’

শুক্রবার লিয়াকত আলিকে তার ছেলেদের হাতে তুলে দেন বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন।
সোনারগাঁয়ে র‌্যাবের অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে বৃদ্ধ নিহত

এ বিষয়ে লিয়াকতের ভাড়া বাসার মালিক কমলা বেগম বলেন, ‘হঠাৎ দেখি ওই ব্যক্তি অসুস্থ। এজন্য নিজে উদ্যোগী হয়ে বৃদ্ধকে তার ছেলেদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করি। কথামতো তারা নিয়েও যায়। কিন্তু বাড়িতে নয়, একটি গণশৌচাগারে। ঘটনাটি শোনার পর বিষয়টি পুলিশকে অবগত করা হয়। বোয়ালিয়া থানার ওসিকে ফোন করলে তিনি তার ছেলেদের ডেকে বৃদ্ধকে তাদের হাতে তুলে দেন।’

বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে তার ছেলেদের ডাকি। এ সময় তার বড় ছেলের হাতে তার বাবাকে তুলে দেওয়া হয়। আমি নিজে তার ছেলের বাড়িতে গিয়ে রাতেই রেখে আসি। আজ শনিবার সকালেও আমি তার খোঁজখবর নিয়েছি। এখন বৃদ্ধ ভালো আছেন।’

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com