
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এভাবে চলতে থাকলে তা হবে জাতির জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আজ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দেশে ভয় ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। মানুষ এখন সত্য কথা লেখেও না, বলেও না। যারা প্রতিবাদী, তারাও আর সত্য কথা বলে না। তারা আওয়ামী লীগের অন্যায়ের প্রতিবাদও করে না। বর্তমানে দেশে এতগুলো টিভি চ্যানেল ও পত্রিকা, কই তারা তো ভিন্ন মতের খবর দেখাতে ও বলতে পারে না।’
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আজ রোববার দুপুরে ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিকল্প নেই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নেই। তাহলে বাংলাদেশে কেন? আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিল। তারা সে সময় বলেছিল যে, বাংলাদেশে যে দল ক্ষমতায় যায়, পরে তারা ফের ক্ষমতায় থাকার জন্য ম্যানিপুলেশন করে। এমনকি আওয়ামী লীগ ওই দাবিতে দেশে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে দিয়েছিল। বাসের মধ্যে গানপাউডার দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারল। একপর্যায়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সে সময় দেশ, জনগণ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। দল-মত নির্বিশেষে সবার একটা মত ছিল যে বাংলাদেশ হবে গণতান্ত্রিক। জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি সংসদের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা হওয়ার কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিজেরাই ১৯৭৫ সালে সেই পদ্ধতি নষ্ট করে ফেলেছে। কারণ, আওয়ামী লীগ সব সময় সামন্ততন্ত্রে থাকতে চায়। তাদের মধ্যে জমিদারি ভাব সব সময় থাকে। তারা ভিন্নমতকে সহ্য করতে পারে না। সে জন্যই সে সময় ৩০ হাজার তরুণ যুবককে হত্যা করেছে। কারণ তারা সব দিক থেকে ব্যর্থ হয়েছিল। জনগণ তাদের বিরুদ্ধে এমন ক্ষেপে গিয়েছিল যে তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করেছিল।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ ভয় পেলে চলবে না। আবারও আমাদের জেগে উঠে গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে এ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে, যাতে আমরা জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারি। আওয়ামী লীগ নির্বাচন নিয়ে আবারও পুরোনো ফাঁদ পেতেছে। তারা দেখাচ্ছে যে সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে। আসলে এগুলো হচ্ছে তাদের শয়তানি। তারা দেশের মানুষকে বোকা ভাবছে। কিন্তু দেশের মানুষ তাদের ফাঁদে পা দেবে না।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই প্রথমে নিজেরা আদালতকে ব্যবহার করে সেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে—একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করা। এ জন্য যিনি রায় দিয়েছেন, সেই বিচারক খায়রুল হককে একদিন জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তিনি বাংলাদেশের যে ক্ষতি করেছেন, সে জন্য। তবে এবার দেশের তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে সব শ্রেণির মানুষ জেগে উঠেছে। আসুন, সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাই। তবেই আমাদের দাবি আদায় করা সম্ভব হবে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানলে সারা দেশে মানুষ যে যেখানে আছে, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে। এবার তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো একতরফা নির্বাচন করতে পারবে না। দেশের মানুষ কঠোরভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। সুতরাং আমাদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা করে লাভ নেই। আমরা শেখ হাসিনার পতন ছাড়া ফিরব না।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করতে আওয়ামী লীগ সরকার উন্মাদ হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের যে রক্ষা হবে না। এরই মধ্যে দেশের জনগণ তাদের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে গেছে।’
জাগপা সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান বলেন, ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে পিষ্ট করে ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে সরকার। তবে দেশের মানুষ তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। ইনশাআল্লাহ, সম্মিলিতভাবে দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে এ ভোট ডাকাত আওয়ামী লীগ সরকারের পতন নিশ্চিত করেই আমরা ঘরে ফিরব।’
জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহাদাত হোসেনের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারী, গণদলের চেয়ারম্যান এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী, ডিএল-এর সাইফুদ্দিন মনি, বাংলাদেশ ন্যাপের এম এম শাওন সাদেকী, জাগপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দিনাজপুর জেলার সভাপতি রকিব চৌধুরী মুন্না, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলা সভাপতি আ স ম মিসবাহ উদ্দিন, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ হুমায়ূন রশিদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. আওলাদ হোসেন শিল্পীসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী।