
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে কান ধরে বিদায় করতে চান গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, সরকার যদি সোজা পথে না হাঁটে, রাজপথে তাদের কান ধরে বিদায় করা ছাড়া, গলায় গামছা লাগানো ছাড়া বাংলাদেশের মানুষকে কোনোভাবে আমরা রক্ষা করতে পারব না।
আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পদযাত্রা-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এই কথা বলেন।
সাইফুল হক বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সরকারের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ১৭ কোটি মানুষ কেউ আর এই সরকারকে দেখতে চায় না। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, সোজা পথে হাঁটেন, সেরাতুল মোস্তাকিম ধরেন। কীভাবে পদত্যাগ করবেন, তা ঠিক করেন।
তিনি বলেন, সরকারের বিদায় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চ সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে সব বিরোধী দল নিয়ে রাজপথে সমন্বিতভাবে এই লড়াই এগিয়ে নেব। এবার মানুষের বিজয় হবে, বাংলাদেশ জিতবে।
এদিকে পদযাত্রায় আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ না করলে কঠোর কর্মসূচিরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলছি, তোমার অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাব না। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, তোমাকে যেতে হবে, পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভাঙতে হবে; তার পরে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হবে। সেই সরকার দেশে নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে, যাতে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়।
তিনি বলেন, যে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলা হচ্ছে, আমরা সেই যুগপৎ কর্মসূচির মধ্যে আছি। এর আওতায় এমন কর্মসূচি দেওয়া হবে, সরকার আর কথা বলার জায়গা পাবে না। আমরা সেই আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।
নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যেই স্যাংশন আসে নাই, যেই স্যাংশনের কথা আমেরিকা বলে নাই, তার কথা সরকার প্রচার করছে কেন। কারণ একটাই, দেশে তাদের পায়ের নিচে মাটি নাই, মানুষ তাদের পক্ষে নাই। আন্তর্জাতিক যারা ছিল, তারা সবাই এক এক করে বলেছে, হয় ভালো নির্বাচন দাও, না হলে আমরা আমাদের কাজ করব। সেই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা ও তার সরকার মনে করেছে, যেতে যখন হবেই, তখন একটা বাহানা তৈরি করি। গণআন্দোলনে যেহেতু আমরা যাচ্ছি না, ওই আমেরিকার কারণে, বিদেশি শক্তির কারণে যেহেতু যেতে হচ্ছে। সে জন্য তাদের (বিদেশি) নামে বিভিন্ন কথাবার্তা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ বলে আমরা আওয়ামী লীগকে সরিয়ে আরেকটা পার্টিকে বসালাম; ওই কাজ করতে আসিনি। আমরা আওয়ামী লীগ বদলাব, এই দুর্নীতিবাজ, দুর্নীতি, অন্যায়-অত্যাচার, রাষ্ট্র যেটা জনগণের ওপর অত্যাচার করে, সেটাও বদলাব। এ ছাড়া জনগণের জন্য উপযোগী কল্যাণকর, জনগণের জন্য সমস্ত অধিকার নিশ্চিত করে সেইরকম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব। এই লড়াই আমাদের অব্যাহত থাকবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, এখন থেকে নাকি তারা প্রতিরোধ করবেন। আমাদের লড়াইটা জনগণের অধিকার আদায়ের লড়াই। এই লড়াই তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক দল হিসেবে দেউলিয়া হয়ে গেছে, এটাই তার প্রমাণ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরসহ ১৪ দফা দাবিতে পদযাত্রা হয়। পদযাত্রাটি পল্টনে মোড় হয়ে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক গিয়ে শেষ হয়। ২৮ মে ঢাকার মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত পদযাত্রা করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। এরপর আগামী ৪ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত দিনাজপুর অভিমুখে রোড মার্চ করবে তারা।
নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সারের পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বাংলাদেশ ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামালউদ্দিন পাটোয়ারী, স্থায়ী কমিটির সদস্য সিরাজ মিয়া প্রমুখ বক্তব্য দেন।