
সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেই আওয়ামী লীগ সরকার নিজেই বিভিন্ন ধরনের সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটিয়ে তার দোষ বিএনপির ওপর চাপায়। এটা তাদের পুরোনো অভ্যাস। তবে এবার আর সে রকম করতে দেবে না বাংলাদেশের মানুষ। জনগণ এবার নিজের ভোট নিজেই দিতে চায়।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তারাই হরতাল করেছিল। এখন তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ৩০টি আসনও পাবে না, তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। যখনই তারা ক্ষমতায় আসে তখনই তাদের স্বরূপে আবির্ভূত হয়। ‘৭৫ সালেও তারা বাকশাল করেছিল, একইভাবে তারা ভিন্ন চেহারায় একই শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ইতিমধ্যে ধ্বংস করে দিয়ে তারা আবারও ক্ষমতায় যেতে চায়। তবে এবার সেটা হবে না, জনগণ জেগে উঠেছে।
আজ সোমবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের কালিবাড়ীতে নিজ বাসভবন চত্বরে জেলা বিএনপি আয়োজিত বর্ধিত সভায় যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. জাহিদুর রহমান জাহিদ, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী প্রমুখ।
পঞ্চগড়ের ঘটনা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণ যখনই গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন গড়ে তুলছে, তখনই সরকার এ জাতীয় সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটিয়ে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চায়। একইসঙ্গে বিএনপির ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করতে চায়। ঘটনার পরপরই কোনো তদন্ত ছাড়াই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন- ওই ঘটনার সঙ্গে বিএনপি জড়িত। এতে বোঝা যায় যে, ব্যাপারটা পূর্বপরিকল্পিত। এটা তাদের পুরোনো অভ্যাস।
তিনি আরও বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে এই প্রচার চালাচ্ছে। এই সরকার গোয়েন্দা বাহিনীকে ব্যবহার করে বিএনপির বিরুদ্ধে যত ধরনের অপপ্রচার চালানো যায়, তা তারা করছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, রেলমন্ত্রী সেখানে গিয়ে ওই সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে কিন্তু একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং তারা পরিষ্কার করে বলেন- ‘আপনাদের পাশে যারা আছে তারাই এ ঘটনার সাথে জড়িত’।
মির্জা ফখরুল বলেন, সেখানে বিভিন্ন রঙের পতাকা দিয়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িঘর চিহ্নিত করা হয়। সেখানে নির্দয়, অমানবিক, নির্মমভাবে তাদের বাড়িঘরে আক্রমণ করে লুটপাট চালানো হয়েছে। দুজন মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। একজনকে কুপিয়ে আরেকজনকে পুলিশের গুলিতে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার পরও আমরা কি দেখব যে, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্তের ব্যবস্থা করবেন। তা না করে সরকার উল্টো বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টায় রয়েছে। উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা তাদের এখনো রয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, চরম অন্যায়ভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ১৮০ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পঞ্চগড়ে প্রকৃতপক্ষে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা বাড়িতে থাকতে পারছেন না। যেখানে সরকার ওই বিতর্কিত জলসা করার অনুমতি দিয়েছিল, তাহলে তাদের সুরক্ষা দেওয়ার দরকার ছিল। সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ বিএনপি ছোটখাটো কোনো কর্মসূচি নিলে পুলিশের ছড়াছড়ি হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য জনগণের যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন, তাদের অধিকারের জন্য, এ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে, সেই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যেতে এই অপপ্রচার ও অপকর্ম। তথ্যমন্ত্রীকে বলব- এ জাতীয় প্রচার থেকে বিরত থাকুন। সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে কখনো একটা দেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করা যায় না।