গত ৭ ডিসেম্বর থেকে কারাগারে বন্দি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর শারীরিক অসুস্থতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। একই সঙ্গে অনতিবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি এবং সুচিকিৎসার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী প্রায় দেড় মাসের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি রয়েছেন। রিজভী একজন মার্জিত, পরিচ্ছন্ন ও সুপরিচিত রাজনীতিবিদ। গত সোমবার থেকে তিনি পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন এবং বমি করেছেন। এমতাবস্থায় তার জীবনে বড় ধরনের জটিলতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
নেতৃদ্বয় বলেন, ‘এমনিতেই তিনি নানা রোগে আক্রান্ত। মহামারি করোনাকালেও তিনি কয়েকবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় চার মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাকে চিকিৎসকের পরামর্শে খুবই মেপে জীবনযাপন করতে হয়। অথচ কারাগারের ভেতরে রিজভীকে জীর্ণ কক্ষে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে থাকতে দেওয়া হয়েছে। তাকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে নেওয়ার পরের সপ্তাহে প্রায় তিন থেকে চার দিন আদালতে আনা-নেওয়া করা হচ্ছে। একজন বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিকে এভাবে বারবার কারাগার থেকে আদালত এবং আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার কারণে রিজভী আরও বেশি অসুস্থ হয়েছেন বলেই সর্বমহলে আলোচনা।’
ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, “আমরা জেনেছি, রিজভীর স্ত্রী আরজুমান আরা আইভী কারাগারে গেলে তাকে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। কারা কর্তৃপক্ষকে বারবার ফোন দিলেও তারা ফোন ধরেননি। কারাগারে গিয়ে যোগাযোগ করলে জেল সুপার দেখা করেননি, রিজভীর সঙ্গেও দেখা করতে দেননি। ডেপুটি জেলার আমিনুর রহমান দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখে বলেন, ‘রিজভী সাহেব ভালো আছেন। তাকে চিকিৎসকরা দেখাশোনা করছেন। আপনি চলে যান।’ একজন অসুস্থ ব্যক্তির স্ত্রীকেও দেখা করতে না দেওয়াটা চরম অমানবিক।”
তারা আরও বলেন, ‘রুহুল কবির রিজভী শুধু রাজনীতিবিদ নন, তিনি একজন আইনজীবীও বটে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক নির্বাচিত ভিপি। তিনি নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে নিজের জীবনবাজি রেখে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। রিজভীর মতো অসংখ্য ছাত্রনেতা সে সময় রাজপথে নেমে এসেছিলেন স্বৈরতন্ত্রের পরিবর্তে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে। রিজভী পরে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।’
ইউট্যাবের নেতৃদ্বয় বলেন, ‘আমরা শিক্ষক সমাজ মনে করি যে, রিজভীর মতো একজন সজ্জন রাজনীতিবিদকে কারাগারের ভেতরে নিম্ন পরিবেশে থাকতে দেওয়ার কারণেই তার শারীরিক অবস্থা আরও অবনতি হয়েছে। তা না হলে যেই রিজভী সুস্থ অবস্থায় কারাগারে গেলেন, সেই ব্যক্তি কীভাবে এত অল্প সময়েই গুরুতর অসুস্থ হলেন? অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি এবং কারাগারের বাইরে বিশেষায়িত হাসপাতালে সুচিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় রুহুল কবির রিজভীর কিছু হলে তার দায় সম্পূর্ণভাবে কারা কর্তৃপক্ষ এবং সরকারকেই বহন করতে হবে।’