বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের অবদান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে দেশভাগ এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর স্বাধীনতা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৩টি বছর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়েছেন। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ’৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের কোথায় জিয়াউর রহমানের নাম আছে?’
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর নিমতলী এলাকায় এক সেমিনারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। ‘বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন : সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক দিনব্যাপী এ সেমিনারের আয়োজন করে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ (এএসবি)।
সংস্কৃতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘গবেষণা ছাড়া কোনো কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করা যায় না। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি সব সময় বলেন। তবে তিনি কৃষি নিয়ে গবেষণায় খুব আশাবাদী। আর চিকিৎসা খাতের গবেষণা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ, চিকিৎসকরা শুধু প্র্যাকটিস নিয়ে ব্যস্ত। তারা গবেষণা করতেই চান না। সুতরাং সেই জায়গা থেকে এশিয়াটিক সোসাইটি আলাদা, যার জন্মই হয়েছে গবেষণা করার লক্ষ্যে।’
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী গবেষক ও এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ অনেকেই বলেন স্বাধীনতা আন্দোলনে জিয়াউর রহমানের কথা। আমি বলব, ২৩ বছরের ইতিহাসে কোন জায়গায় জিয়াউর রহমানের নাম আছে? তার নাম তো শোনা গেল বঙ্গবন্ধু হত্যার পর একজন খুনি হিসেবে। তার আগে কোন জায়গায় তার নাম আছে? অতএব, স্বাধীনতার পূর্বাপর বিষয় নিয়ে আরও বিশদ গবেষণা করবেন।’
গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ প্রসঙ্গে কে এম খালিদ বলেন, ‘আমরা যা বরাদ্দ দিয়ে থাকি, প্রকৃতপক্ষে তা খুবই অপ্রতুল। এটি বাড়ানোর জন্য কাজ চলছে। এরই মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে বৃত্তি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, আবেদনও জমা পড়েছে। যারা গবেষণা করবেন বা পিএইচডি করতে আগ্রহী, তারা আবেদন করতে পারবেন।’ এ ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
দিনব্যাপী সেমিনারে মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং তথ্যপ্রযুক্তিসহ মোট ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনার জন্য নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা, উচ্চশিক্ষা ও প্রত্যাশা, পরিবেশ ও দুর্যোগ, পাওয়ার ও এনার্জি, তথ্যপ্রযুক্তি খাত ও সাইবার নিরাপত্তা এবং প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ের ওপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষকরা বিস্তারিত আলোচনা করেন।
সেমিনারের সভাপতি এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হাফিজা খাতুনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন এএসবির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক প্রমুখ। এ সময় এশিয়াটিক সোসাইটির কাউন্সিল সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। পরে দিনব্যাপী সেমিনারে বক্তব্য দেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ, পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক লুৎফর রহমান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন, এএসবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ, অধ্যাপক আবুল কালাম সরকার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. গোবিন্দ চক্রবর্তী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আবদুল মালেক, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজাউর রহমান, অধ্যাপক ড. এজাজ হোসেইন, অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নুর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মইন উস সালাম, খনিজ প্রকৌশলী ড. মুশফিকুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. উপমা কবীর, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মির্জা হাসানুজ্জামান প্রমুখ।