প্রদীপ মোহন্ত, বগুড়া
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:০০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

বগুড়ার দুই আসন দখলে মাঠে সবাই

বগুড়ার দুই আসন দখলে মাঠে সবাই

বিএনপির সংসদ সদস্যদের ছেড়ে দেওয়া বগুড়ার শূন্য দুই আসনের দখল নিতে মরিয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিকরা। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এর মধ্যেই আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি তাদের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে।

বগুড়া-৪ আসনের (কাহালু-নন্দীগ্রাম) উপনির্বাচনে প্রার্থী দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। ১৪ দলের শরিক জাসদকে এ আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে এই আসনে এখন ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী থাকছেন জেলা জাসদের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল করিম তানসেন। এ খবরে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে। এ ছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যারা দলীয় মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছিলেন, সেসব নেতারাও হতাশা প্রকাশ করেছেন।

নন্দীগ্রাম উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং কাহালু উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত বগুড়া-৪ আসন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় এই আসন থেকে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হন জাসদের রেজাউল করিম তানসেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আবারও মহাজোট থেকে মনোনয়ন পান তিনি। কিন্তু সেবার বিএনপি প্রার্থী মোশারফ হোসেনের কাছে পরাজিত হন তিনি। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে ১ লাখ ২৮ হাজার ৫৮৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন বিএনপির মোশারফ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মহাজোটের রেজাউল করিম তানসেন পান ৮৬ হাজার ৪৮ ভোট।

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ভোটে হারার পর থেকে এলাকায় দেখা যায়নি রেজাউল করিম তানসেনকে। এর মাঝে গত ১১ ডিসেম্বর বিএনপি সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করায় তিনি আবারও সরব হন। এই আসনসহ অন্যান্য আসনে উপনির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হলে জাসদের এই নেতা কেন্দ্রীয় কমিটির মাধ্যমে আবারও সেখানে মহাজোট প্রার্থী হয়েছেন।

নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, রেজাউল করিম তানসেন এলাকার কোনো উন্নয়ন করেননি। এলাকার লোকজন তার ওপর ক্ষুব্ধ। শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীই নন, এলাকার সাধারণ জনগণের সঙ্গেও তার কোনো যোগাযোগ নেই। ভোটের সময় তিনি সরব হলেও অন্য সময়ে তার দেখা মেলে না।

কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীই এই আসনে দলের প্রার্থী চায়। কারণ বিগত দিনে জাসদ নেতা রেজাউল করিম তানসেন আওয়ামী লীগের মার্কা নিয়ে ভোট করে পরে তৃণমূল কর্মীদের আর কোনো খোঁজখবর রাখেনি; বরং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন।

এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন কবিরাজ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, তার পক্ষেই নির্বাচন করতে হবে। দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অধ্যক্ষ আহসানুল হক বলেন, দল করলে দলীয় সিদ্ধান্ত মানতেই হবে। তবে এই আসনে জোটের প্রার্থীর অতীত রেকর্ডটা ভালো নয়, এটাই সমস্যা।

এ বিষয়ে রেজাউল করিম তানসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলেন। এ কারণে কেউ কেউ হতাশ। কিন্তু ভোটের সময় সবাই জোট মনোনীত প্রার্থীর হয়ে কাজ করবেন বলেই আমি বিশ্বাস করি। আমি আগে থেকেই তাদের সঙ্গে ছিলাম, আগামীতেও থাকব।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গত রোববার রাতে বগুড়া-৬ আসনে তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসন জাসদকে ছেড়ে দিলেও বগুড়া-৬ (সদর) আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপুকে মনোনয়ন দিয়েছে।

জাতীয় পার্টি এই দুটি আসনে মনোনয়ন দিয়েছে। বগুড়া-৬ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক চিফ হুইপ নুরুল ইসলাম ওমর এবং বগুড়া-৪ আসনে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মোস্তফা শাহীন ফারুককে প্রার্থী করেছে তারা।

শাহীন মোস্তফা কামাল ফারুক জানান, জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু স্বাক্ষরিত দলীয় মনোনয়নপত্র তাদের দুই প্রার্থীকে দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসন দুটিতে ভোট গ্রহণ করা হবে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি। আগামী ৫ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র দাখিল, ৮ জানুয়ারি বাছাই, ১৫ জানুয়ারি প্রত্যাহার ও ১৬ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ।

বগুড়া-৬ সদর আসনে মনোনয়ন পাওয়া রাগেবুল আহসান রিপু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। গত ২০১৪ সালের নির্বাচনেও প্রাথমিকভাবে আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। পরে মহাজোটের প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় দলীয় স্বার্থে আমার ভোটে থাকা সম্ভব হয়নি। তবে এবার শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকতে আমি আশাবাদী।’

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান মজনু বলেন, উপনির্বাচন হলেও বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে নিয়েছি। সবাই মিলে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করব।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত-সমালোচিত হিরো আলম বগুড়ার দুটি আসন থেকেই ভোট করবেন বলে মনোনয়ন তুলেছেন। মনোনয়নপত্র তোলার পর হিরো আলম জানান, নির্বাচনী প্রতীক পাওয়ার পর তিনি এ নিয়ে গান করবেন। বলেন, ‘বগুড়া ৪ ও ৬ নম্বর আসনে এবার নির্বাচন করতে চাই। যেহেতু সদরে আমার বাসা, তাই এলাকাবাসী চায়, আমি সদর থেকে ভোট করি।’

বগুড়া-৪ আসনে একবার নির্বাচন করেছিলাম। তাই সেখানেও নির্বাচন করতে চাই। সদরের এলাকাবাসী এবং কাহালু-নন্দীগ্রামের এলাকাবাসীর জন্য দুই আসন থেকেই নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

হিরো আলম বলেন , ‘নির্বাচনে হারলেও চেষ্টা চালিয়ে যাব। চেষ্টা অব্যাহত থাকলে সুফল এক দিন আসবেই।’

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান জানান, একজন প্রার্থী চাইলে তিনটি আসন থেকে মনোনয়ন ফরম নিতে পারেন, হিরো আলম দুটি আসন থেকে তুলেছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গণঅধিকার পরিষদের খাবার পানি ও ফল বিতরণ

সিনিয়র এক্সিকিউটিভ পদে মেঘনা গ্রুপে চাকরি, কর্মস্থল ঢাকা

ফের মাউশির ডিজি হলেন অধ্যাপক নেহাল

আজও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়

স্বাস্থ্য শিক্ষার এডিজি হলেন স্বাচিপ মহাসচিব

উপনির্বাচনকে সামনে রেখে ফের উত্তপ্ত শৈলকুপা

হিটস্ট্রোকে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

চাঁদা না পেয়ে ছাত্রলীগ নেতাকে বেধড়ক পিটুনি

সাংবাদিকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি মামলা

স্ত্রীর দাবি, সালমান শাহ-শাকিবের মতোই এবার টার্গেট জয়

১০

প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু, গুরুতর অপরাধে লঘু মামলা হয়েছে

১১

বাংলাদেশের উন্নতি দেখে আমাদের লজ্জা হয় : পাক প্রধানমন্ত্রী

১২

শাহজাদপুরে বৃষ্টি কামনায় ইসতেসকার নামাজ আদায়

১৩

চুয়েটে উপাচার্য অবরুদ্ধ, হল না ছাড়ার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

১৪

শিশু ধর্ষণের অভিযোগে ৬০ বছরের বৃদ্ধ গ্রেপ্তার

১৫

নাভালনির শেষকৃত্য করা সেই পুরোহিতকে চরম শাস্তি

১৬

চরমোনাই পীরের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা 

১৭

গাজীপুর ওয়ালটন এসি কিনে মিলেনিয়র হলেন স্যানিটারি ব্যবসায়ী

১৮

শূন্য রানে ৭ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড

১৯

ইরান-ইসরায়েল সংকট ও মধ্যপ্রাচ্যের নয়া ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ

২০
*/ ?>
X