আ. লীগ বারবার গণতন্ত্র হত্যা করেছে : ফখরুল

আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।ছবি : কালবেলা

আওয়ামী লীগের হাতে গণতন্ত্র বারবার নিহত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেটা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া পুনরুদ্ধার করেছেন বলেও জানান তিনি।

আজ রোববার বিকেলে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর মতিঝিলে হোটেল পূর্বাণীর হলরুমে ‘কর্তৃত্ববাদের উত্থান ও বিপন্ন গণতন্ত্র’ পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে জিয়া পরিষদ।

সংগঠনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যাপক মো. এমতাজ হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন—বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, জিয়া পরিষদের অধ্যাপক এম সলিমুল্লাহ খান, ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, অধ্যাপক ড. কামরুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলামসহ অনেকে।

ফখরুল বলেন, আমরা একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই রাষ্ট্র লাভ করেছি। সেই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব, রাজনৈতিক অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। সংকটটা ওই জায়গায়। বিপন্ন হওয়ার কারণ হচ্ছে ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় যে কমিটমেন্ট, যে প্রতিশ্রুতি আমরা জনগণের সামনে দিয়েছিলাম। তৎকালীন যারা নেতৃত্বে ছিলেন, তারা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আজকের এই ৫২ বছর সমস্ত কমিটমেন্টগুলো তারা নস্যাৎ করে দিয়ে একটা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা দ্বিতীয়বারের মতো ছদ্মবেশে নিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ। এদের হাতে গণতন্ত্র বারবার নিহত হয়েছে। সেটা পুনরুদ্ধার করেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই যেটা আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেনি। দেশে কোনো আইনের শাসন নেই। পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের বিনা ওয়ারেন্টে, বিনা মামলায় তুলে নিয়ে গিয়ে একই কায়দায় নাশকতা, বিস্ফোরণ এসব মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখায়। মামলায় ১০০ জনের নাম দেয় ওই এলাকায় যারা বিএনপি নেতাকর্মী। বাকি দেয় এক হাজার অজ্ঞাত নাম। পঞ্চগড়ে দিয়েছে ১৬ হাজার অজ্ঞাতনামা। এতে দুটি কাজ হয়, ওই মানুষগুলো ঘরছাড়া হয়ে যায়। বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যায়। আরেকটি হলো বিরাট বাণিজ্য শুরু হয়ে যায়। যারা ভুক্তভোগী তারাই এটা জানেন।

তিনি বলেন, আমাদের ১০ দফায় পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, বর্তমান সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে। কারণ এ সংসদ জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সংসদ নয়। ২০১৪ ও ১৮ সালে কীভাবে নির্বাচন হয়েছে? সেটা আপনারা জানেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সব দলের রাজনৈতিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটি কেয়ারটেকার গভর্মেন্ট তৈরি করতে হবে। তাদের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সে নির্বাচন কমিশন নতুন করে নির্বাচন ব্যবস্থা করবে। সে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন পার্লামেন্ট হবে, নতুন সরকার গঠন করা হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকের এই সংকট উত্তরণে শুধু বিএনপির দায়িত্ব নয়। এটা সকল রাজনৈতিক দলের সব মানুষের দায়িত্ব। দেশ, জাতি ও গণতন্ত্রকে বাঁচাতে, একটি মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা এটা কী চিন্তা করা যায়? কোনো সভ্য গণতন্ত্রীয় দেশে একটি গণতান্ত্রিক দলের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়? এটাকে কি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা যায়?

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ এখন একটা কর্তৃত্ববাদী শাসনের দেশ। বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা বলে কিছু নাই। মাঝে মাঝে অনেকেই প্রশ্ন করেন, আপনারা কী নির্বাচনে আসবেন না, আপনারা নাকি ৮০ সিট নিয়ে আলোচনা করছেন, পাচ্ছেন? কীভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। আচ্ছা বলেন,  সিট দেওয়ার মালিক কে? দেশের জনগণ ছাড়া কী কেউ এ মালিক, জনগণ ছাড়া তো কাউকে দেখি না।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, যে লোকগুলো সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে। তাদের সরকার পক্ষ থেকে দুর্নীতি করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। দেশ থেকে ১০ লাখ হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের দলটাই একটা স্বৈরাচারী দল, এরা আসলে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। কিছু বললেই এরা মারতে আসবে। আর জিয়াউর রহমান গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করে দেশকে এগিয়ে নিয়েছিল। এখন আমরা নিরাপত্তা হারিয়ে ফেলেছি। ২০১৪ সালের পর থেকে এটা শুরু হয়েছে। সুশাসনের জন্য যে জিনিস দরকার সেগুলো বাংলাদেশে আর নাই। আমি শঙ্কিত এ দেশের জন্য। এ দেশকে নতুন করে গড়তে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে ভয় পান, তাই ওনাকে ছেড়ে দেন না।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com