বিগত গণসমাবেশগুলোর মতোই হুমকি আছে পরিবহন ধর্মঘটের। শুরু হয়ে গেছে গ্রেপ্তার-তল্লাশি। তবে এতে পিছপা হচ্ছে না বিএনপি। সব বাধা পেরিয়ে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি খ্যাত ফরিদপুরেও সাংগঠনিক বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে দৃঢ়প্রত্যয়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারা বলছেন, কোনো ধর্মঘট বা অপকৌশলে বিএনপির গণসমাবেশ ঠেকানো যাবে না। সংকট উত্তরণে নতুন কৌশল নেওয়া হয়েছে। ফরিদপুরের ইতিহাসে এই গণসমাবেশ হবে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ।
জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও চলমান আন্দোলনে দলের পাঁচ কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদ এবং খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ একাধিক দাবিতে বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে বিএনপি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর ও বরিশালে গণসমাবেশ করেছে দলটি। আগামী ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে গণসমাবেশ হবে। দলটি সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে সমাবেশ করতে চাইলেও শহরের
বাইরে ৬ কিলোমিটার দূরে আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউটে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এখন সেখানে মঞ্চ নির্মাণের কাজ চলছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের।
এদিকে, ফরিদপুরের গণসমাবেশ ঠেকাতে সরকার ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল বুধবার দুপুরে ফরিদপুর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে এরই মধ্যে ৯ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে নগরকান্দায় আটজন ও ফরিদপুরে একজনকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকজন নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা হয়েছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। তবে কোনো প্রতিবন্ধকতাই সমাবেশকে আটকাতে পারবে না।
এ সময় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক, সেলিমুজ্জামান সেলিমসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, বিকেলে গণসমাবেশস্থল পরিদর্শনকালে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ১২ নভেম্বর সকাল ১১টা থেকে কোমরপুর স্কুল মাঠে গণসমাবেশ শুরু করা হবে। তবে যানবাহনে বাধাসহ সরকারের তরফ থেকে নানাভাবে বাধা সৃষ্টির কারণে বৃহস্পতিবার থেকেই নেতাকর্মীরা গণসমাবেশস্থলে অবস্থান গ্রহণ করবেন। এই গণসমাবেশ ১০ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিন অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশের মাঠ থেকে ফরিদপুর মহানগরী পর্যন্ত পৌঁছে যাবে এই জনসমুদ্র।
জানা গেছে, ফরিদপুর বিভাগীয় (সাংগঠনিক) গণসমাবেশ সফল করতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে দলটি। জেলা-মহানগরে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সভা সম্পন্ন করেছে। ফরিদপুরের গণসমাবেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে বিএনপির কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে বলা হয়, গণসমাবেশের জন্য প্রস্তুত সাংগঠনিক বিভাগবাসী। ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরজুড়ে গণসমাবেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সভা সম্পন্ন করেছেন। গণসমাবেশ সফল করতে গ্রাম, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌর শহর, পৌর ওয়ার্ড, থানা, উপজেলা, জেলা তথা তৃণমূল থেকে সাংগঠনিক বিভাগের সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ইউনিট পর্যন্ত দিনরাত গণসংযোগ ও প্রচারণা চালানো হচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের চৌরাস্তা-তিনরাস্তার মোড়ে, হাটবাজারে, পাড়া-মহল্লায়, জনপদে জনপথে এখন শুধু একটিই আলোচনা—‘ফরিদপুর বিভাগের গণসমাবেশ’।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, গণজাগরণ শুরু হয়েছে। বাঁধ ভেঙে জনগণের জোয়ার উঠেছে। এত পরিবর্তন অতীতে মানুষ কখনো দেখেনি। আমরা তো কাউকে কিছু দিচ্ছি না। তবুও মানুষ দুই-তিন দিন ধরে রাস্তায় খেয়ে-না খেয়ে পড়ে থাকছে। এটাই হলো শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতি ভালোবাসা। এখন আমাদের আন্দোলন বিপ্লবের পর্যায়ে চলে গেছে। আমরা সেই বিপ্লব নিয়ে সামনে এগোচ্ছি।
এদিকে, ফরিদপুরের গণসমাবেশের আগে পরিবহন ধর্মঘটের আলটিমেটাম দিয়েছে জেলা মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। ১০ নভেম্বরের মধ্যে মহাসড়কে তিন চাকার যান বন্ধ না হলে পরদিন ১১ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকে ১২ নভেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত ৩৮ ঘণ্টা সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রাখা হবে। এর আগে একই দাবিতে খুলনা, রংপুর ও বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে পরিবহন ধর্মঘট পালন করেন স্থানীয় পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা।
জানা গেছে, পরিবহন ধর্মঘট হবে—এমনটা ধরে নিয়েই ফরিদপুরের গণসমাবেশ সফলের পরিকল্পনা নিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এর অংশ হিসেবে নেতাকর্মীদের আগেই আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয় সহযোগী ও বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম কালবেলাকে বলেন, ফরিদপুরে বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। শহরের হোটেলগুলোয় বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে যুবলীগ-ছাত্রলীগ আজ (বুধবার) ফরিদপুর শহরজুড়ে শতাধিক মোটরসাইকেলে মহড়া দিয়েছে। শহরের কাটপট্টিতে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে তারা কিছু সময় অবস্থানও নেয়। তবে হুমকি-ধমকি, গ্রেপ্তার করে সমাবেশে জনতার ঢল ঠেকানো যাবে না। নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার থেকে আসা শুরু করবেন বলে জানান তিনি।