অতিদরিদ্র মানুষ জীবন যাপনে যা ব্যয় করে তার তিন ভাগের এক ভাগই চলে যায় চাল কেনার পেছনে। এ ধরনের মানুষ চালের দাম দাম বেড়ে গেলে আরও বিপদে পড়েন। তখন তারা মাছ মাংসের মতো পুষ্টিকর খাবারে ব্যয় কমিয়ে শাকসবজির ওপর নির্ভরতা বাড়িয়ে দেন। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল বুধবার আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস কার্যালয়ে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষক ওয়াসেল বিন শাহাদাত। এতে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। প্রতিবেদনে ২০১৬ সালের খানা আয় ব্যয় জরিপের তথ্যের ভিত্তিতে মানুষের খাদ্য গ্রহণের ধরন তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। যেখানে ১৩২টি খাদ্য পণ্যকে ৯টি খাতের মাধ্যমে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিবেদন তৈরিতে ওই জরিপের ১২ হাজার পরিবারের তথ্য নেওয়া হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের মোট ব্যয়ের ২৯ শতাংশ ব্যয় করে চালের জন্য। তবে খাদ্য বাবদ মোট জাতীয় ব্যয়ের ২১ শতাংশ খরচ হয় চালের পেছনে। আর দরিদ্র না (নন পুওর) এমন পরিবার চালের পেছনে খরচ করে ব্যয়ের দুই শতাংশ। শহরের থেকে গ্রামের মানুষ চালের পেছনে বেশি ব্যয় করে। শহরের মানুষ চাল বাবদ ব্যয়ের ১৯ শতাংশ খরচ করলেও গ্রামের মানুষ খরচ করে ২৩ শতাংশ।
ওয়াসেল বিন শাহাদাত তার প্রতিবেদনে জানান, দরিদ্র থেকে অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে চাল অত্যাবশ্যকীয়। তাই বাজারে চালের দাম বাড়লেও সাধারণ মানুষের ভোগের পরিমাণ কমে না। তবে চালের দাম বাড়লে দরিদ্ররা পুষ্টিকর খাবারের পেছনে ব্যয় কমিয়ে দেয়। পুষ্টিকর খাবরের হিসেবে পরিচিত মাছ, মাংস, ফলমূল ও ডালের চাহিদা বাদ দিয়ে সবজির ওপর নির্ভরতা বেড়ে যায় তাদের। এদিকে নারীদের তুলনায় পুরুষেরা বেশি পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে থাকে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে করোনার সময়ের মানুষের আয়ে প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, করোনার প্রথম লকডাউনের সময় মানুষের আয় প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়েছিল। তবে লকডাউনের শেষে মানুষের আয় কিছুটা বেড়েছে। ওই সময় আয় কমার হার ছিল ৪৩ শতাংশ। আর দ্বিতীয়বার লকডাউনের শেষে আয় কমার পরিমাণ দাঁড়ায় মাত্র ৪ শতাংশ। লকডাউন ওঠে যাওয়ার ফলে ধারাবাহিকভাবে মানুষের আয় পুনরুদ্ধার হতে থাকে। আয় কমে যাওয়া এবং পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ফলমূল খাওয়ার ওপর সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আয় কমার ফলে খরচ কমে ১৬ শতাংশ। পণ্যমূল্য বাড়ায় ফল বাবদ খরচ কমে ৬৯ শতাংশ। এ সময় মাছ, মাংস, ডিম, ডালের চাহিদাও উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়।
গবেষণার বিষয়ে বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, দাম বাড়লে মানুষের পুষ্টিকর খাবারের ক্ষেত্রে এক ধরনের ছাড় দিতে হয়, সেটাই এই গবেষণায়ে উঠে এসেছে। আরেকটি বিষয় উঠে এসেছে সেটা হলো করোনার কারণে আয় কমে যাওয়ার পরিমাণ ৭০ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশে নেমে আসে। তিনি বলেন, করোনার শেষের দিকে মানুষের আয়ে একটি পুনরুদ্ধার ঘটেছে।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর এক প্রশ্নের জবাবে গবেষক ওয়াসেল বলেন, অনেক সময় বলা হয় যে মুরগির দাম বেড়ে গেলে মানুষ মাছ খাবে বেশি কিন্তু বাস্তবে তা ঘটে না। মাছের দাম বাড়লে ফল ও ডালের ভোগ বাড়বে। আবার মাংসের দাম বাড়লে সব কিছুর ভোগ কমে আসবে। তিনি বলেন, এসব ক্ষেত্রে সরকারের নীতি সহায়তা বাড়াতে হবে। চালের দাম বাড়লে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা বাড়াতে হবে। আর মাছ মাংসের মতো পণ্যের দাম বাড়লে জনগণের আয় বাড়াতে হবে বলে পরামর্শ দেন বিআইডিএসের এই গবেষক।