বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে একটি সংখ্যালঘু বাড়িতে পুলিশি তাণ্ডবের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। আজ মঙ্গলবার পরিষদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, উপজেলার জিউধরা ইউনিয়নের ডুমুরিয়া গ্রামে জ্যোতিন অধিকারীর বাড়িতে তালা ভেঙে পুলিশি তাণ্ডব চালানো হয়েছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় এলোমেলো করা হয়েছে দেবতার বিগ্রহ এবং ভাঙা হয়েছে পূজা ও কীর্তনের সামগ্রী। সনজিত অধিকারী, প্রসেনজিৎ অধিকারী ও তাদের পিতা জ্যোতিন অধিকারী এই বাড়িতে কয়েক বছর ধরে বসবাস করছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ওই রাতে গ্রাম পুলিশ রনজিত মণ্ডলকে সাথে নিয়ে লক্ষ্মীখালী পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা সুফল সরকার বাড়িটির সামনে গিয়ে চিৎকার করে বাড়ির মালিকদের ডাকতে থাকে। সে সময়ে বাড়ির ভেতরে কেউ না থাকায় সাড়া না পেয়ে পুলিশ তালা ভেঙে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে। ঘটনাস্থলে পরিবারের কেউ না থাকায় গ্রাম পুলিশ রনজিতের মাধ্যমে তাদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে সনজিতের ভাই প্রসেনজিৎ অধিকারীকে মুঠোফোনে জানায়, ‘তোমাদের বিরুদ্ধে ওসি সাহেবের কাছে অভিযোগ আছে। আমি তোমাদের বাড়ি থেকে কিছু আলামত ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছি, তোমরা আগামীকাল সকাল ১০টায় লক্ষ্মীখালী পুলিশ ক্যাম্পে যোগাযোগ করবে।’
সনজিতের ভাই প্রসেনজিৎ বিভিন্নভাবে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। এমনকি দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা সেখানে পৌঁছাতেও চান। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা সুফল তাদের কোনো কথা না শুনে বাড়ি থেকে কাঠ, বাঁশসহ বিভিন্ন সামগ্রী নছিমন গাড়ি এনে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের।
কিছুক্ষণের মধ্যে তারা তাদের বাড়ি পৌঁছে সেখানে ছত্তার খলিফা ও মজিবরসহ কয়েকজন অপরিচিত লোককে দেখতে পায়। সনজিতদের উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। সনজিত, প্রসেনজিৎসহ ওদের বাড়ির লোকেরা দেখতে পায় ইতিমধ্যে তাদের ঘরের বেশ ক্ষতি হয়েছে, বিশেষ করে মন্দিরের দেবতার বিগ্রহগুলো এলোমেলো করে ভাঙা হয়েছে। ঢোল, ডংকা ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে এবং নিত্যপূজার সামগ্রী তছনছ করা হয়েছে।
সনজিত অধিকারী কয়েক বছর আগে ২০১৮ সালে সেখানে জমি কিনে নতুন বাড়ি তৈরি করেন। একই খতিয়ানভুক্ত জমি ক্রয় করে একই এলাকার ছত্তার খলিফা। সনজিতের ক্রয়কৃত এই জমিতে বাড়ি নির্মাণ কাজ শেষের দিকে চলে এলে ছত্তার দাবি করে এই জমি তার। কিন্তু সনজিত অধিকারীর দলিল, দলিলের চৌহদ্দি, নামজারি সবকিছু সঠিক থাকায় স্থানীয় সালিশিতে সে জিতে যায়। কিন্তু ছত্তারের হয়রানি থেকে রক্ষা পায় না। অবশেষে সনজিত আদালতের দ্বারস্থ হয়, জারি হয় ১৪৪ ধারা। আদালতের বিচার শেষে রায় আসে সনজিতদের পক্ষে। কিন্তু রায় পেলেও পুলিশ কর্মকর্তা সুফল সেসবের তোয়াক্কা না করে তাদের ঘর ভাঙচুর করে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আস্থা বিনষ্ট করবে। কেন্দ্রীয় কমিটি অবিলম্বে পুলিশ ও স্থানীয় দখলদারদের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগের সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্তসাপেক্ষে বিচার ও প্রতিকার দাবি করেছে।